জাতীয়

‘শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন তথ্যভিত্তিক ও বিশ্লেষণধর্মী’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘শুল্ক গোয়েন্দার গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি ছিল মূলত তথ্যভিত্তিক ও বিশ্লেষণধর্মী এবং গোপনীয়। প্রতিবেদনে মাঠ পর্যায়ে বাস্তব অবস্থার একটি চিত্র নীতিনির্ধারণীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ‘শুল্ক গোয়েন্দা ডিজি মইনুলের ধৃষ্টতায় হতবাক এনবিআর’ শীর্ষক বিশেষ সংবাদ প্রসঙ্গে রোববার গণমাধ‌্যমে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তিনি এ মন্তব‌্য করেন। ড. মইনুল খান বর্তমানে কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি তাকে শুল্ক গোয়েন্দা থেকে ওই দপ্তরে বদলি করা হয়। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘সংবাদটি সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ায় আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। শুল্ক গোয়েন্দার গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি ছিল মূলত তথ্যভিত্তিক ও বিশ্লেষণধর্মী এবং গোপনীয়। এই প্রতিবেদনে মাঠ পর্যায়ে বাস্তব অবস্থার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে নীতিনির্ধারণীর কাছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে। তা ছাড়া শুল্ক গোয়েন্দার এই গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি নতুন নয়। এর আগে বিষয়টি নিয়ে এনবিআরে রাজস্ব সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। পত্রিকার রিপোর্টে “ধৃষ্টতা”, “প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা” ইত্যাদি শব্দগুলো প্রকৃত শুল্ক গোয়েন্দার গোপনীয় প্রতিবেদনের সাথে সম্পূর্ণ পরিপন্থি। প্রকৃতপক্ষে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের মূল বার্তাকে পত্রিকার সংবাদটিতে উল্টোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’ প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস বিভাগ চট্রগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে ২৪/৭ খোলা রাখার ব্যবস্থা করেছে। এই কার্যক্রমের ছয় মাসের বেশি অতিবাহিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ব্যবহারের আরো সুযোগ রয়েছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিশেষ করে জনবলের ঘাটতি মেটানো, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধির জন্য উদ্বুদ্ধকরণ, পর্যাপ্ত লজিস্টিকস ও ইকুইপমেন্ট বাড়ানো, ব্যাংক, বিএসটিআই, কোয়ারান্টাইনসহ বিভিন্ন রেগুলেটরি সংস্থার সেবা ২৪/৭ অনুযায়ী সহজপ্রাপ্য ও বন্দরে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, এসব সংস্থার মধ্যে আরো সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন ইত্যাদি ছিল সুপারিশের মূল বক্তব্য। বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সরকারি খোলার দিন (রোববার থেকে বৃহস্পতিবার) বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পরিমাণ গড়ে প্রায় ৪,৫০০। প্রধানমন্ত্রীর ২৪/৭ এর অনুশাসনের পর বর্তমানে শুক্রবার এই হার গড়ে প্রায় মাত্র চারটিতে সীমিত রয়েছে। অন্যদিকে, সন্ধ্যা ৭টার পর প্রতিদিন এই হার অন্যান্য সময়ের তুলনায় দশমিক ২১ শতাংশ। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং দ্রুত পণ্য খালাস ও ব্যবসায়ীদের খরচ বাঁচাতে শুক্রবার ও অন্যান্য দিন সন্ধ্যা ৭টার পর এই হার আরো বাড়ানো যৌক্তিক মর্মে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাই এই ব্যবস্থার সর্বোচ্চ সুফল পেতে করণীয় সম্পর্কে চট্টগ্রামে অবস্থিত এবং সরেজমিনে পরিদর্শন করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে চট্রগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দার একটি বিশেষ টিম।’ প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, ‘আমি এবং আমার টিম শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক হিসেবে এনবিআর ও সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় দেশব্যাপী চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছি। স্বর্ণ, মুদ্রা, মাদক, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের পণ্য ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য আটকে সর্বোচ্চ রেকর্ড তৈরি করেছি। আমার সময়ে নানা উপায়ে আনীত প্রায় ৪৫ মণ সোনা, চট্রগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের ভেতর লুকায়িত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার কোকেন, ৭০টি বিলাসবহুল গাড়ি, পল্টনের বাড়ি থেকে ৫ বস্তা নগদ টাকা ও প্রায় ২ মণ সোনা, পাকিস্তান থেকে চোরাচালানকৃত প্রায় ৩০ কোটি ভারতীয় নকল রুপি, চট্টগ্রাম বন্দরে ১২ কন্টেইনারের আটকের সূত্রে প্রায় ১২০ কন্টেইনারে প্রায় ১০৫০ কোটি টাকার মদ, সিগারেট ও ইলেক্ট্রনিকস চোরাচালানি পণ্য, ১৫টি বাণিজ্যভিত্তিক মানিলন্ডারিং অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্ত, উত্তর কোরীয় কূটনীতিকের চোরাচালানকৃত গাড়ি ও সিগারেট, আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুম থেকে প্রায় ১৫ মণ সোনা ও ডায়মন্ডের অলংকার উদ্ধারসহ শুল্কসংক্রান্ত নানা ধরনের অনিয়ম উদঘাটন ও প্রযোজ্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব দৃশ্যমান কার্যক্রমে অনেক চোরাচালানিরা ও তাদের সহযোগীরা চাপের মধ্যে ছিল। একইসাথে, সবার অংশগ্রহণে শুল্ক বন্দরসমূহে একটা শৃঙ্খলা বজায় ছিল। দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে আমার স্বাভাবিক পদায়ন হয়েছে মর্মে আমি মনে করি। দেশের জন্য ও সরকারি স্বার্থে এবং সরকারি নির্দেশনায় শুল্ক গোয়েন্দার পুরো সময়টা সফলভাবে পার করেছি। শুল্ক গোয়েন্দা এখন তাই সারা দেশব্যাপী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রয়োগকারী জাতীয় সংস্থায় পরিণত হয়েছে। তাই আমি মনে করি, যে সংবাদটি ছাপানো হয়েছে তা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য দ্বারা তাড়িত।’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ মার্চ ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফুল