জাতীয়

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ বাড়লো

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের খোলা বাজার থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ আরো ৬ মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও একটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং মেয়াদউত্তীর্ণ দুটি বিদুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।  বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য. মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কুমিল্লায় দুটি সেতু নির্মাণকাজের ক্রয় প্রস্তাবসহ মোট ৭টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এর আগেও প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে আমদানির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। ইতোমধ্যে সে মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ আরো ছয়মাস বাড়ানোর একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা ৯৮৫৯ পয়সা।’  বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে এ বিদ্যুৎ আমাদনিতে ছয় মাসে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৬১৬ কোটি টাকা। দেশের চাহিদা মেটাতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেডের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। তিন বছর মেয়াদে পিটিসির সাথে স্বাক্ষরিত বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ গত ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অনুমোদনক্রমে আলোচ্য চুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে ৩ বার বৃদ্ধি করা হয়। যার মেয়াদ গত ৩১ জানুয়ারি উত্তীর্ণ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেডের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষ হবার পর তা অব্যাহত রাখার জন্য গত ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর সংশোধিত পিপিএ- এর মেয়াদ ১১ মাস অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অব্যাহত রাখার স্বার্থে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইরে ১৬২ মেগাওয়ায়াট ক্ষমতার ডুয়েল-ফুয়েল ভিত্তিক আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। চায়না কোম্পানি কনসোর্টিয়াম অব চ্যাংজু হু টাং কোল পাওয়ার লিমিটেড এবং দেশীয় কোম্পানি বাংলাদেশ অ্যান্ড চেস পাওয়ার লিমিটেড এ কেন্দ্র স্থাপন করবে। ১৫ বছর মেয়াদি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরকার ৮ টাকা ২৮৬৮ পয়সায় প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে।’ তিনি বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পল্লী সড়ক গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলাধীন জগন্নাথকাঠি চন্দনকাটি জিসি সড়কে ১৫৩৫০ মিটার চেইনেজে কালিগঙ্গা নদীর উপর ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ব্রিজ নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে ১১৫কোটি ৪ লাখ টাকা। নির্মাতা সংস্থা নাভানা লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।’  মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, ‘বৈঠকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘ঢাকাস্থ লালমাটিয়া নিউ কলোনীতে ৭টি জরাজীর্ণ ভবনের স্থলে ১২০টি (সংশোধিত ১৩০টি) আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তা ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়।’ তিনি বলেন, ‘বৈঠকে কুমিল্লা (টমছম ব্রিজ) নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ১ ও প্যাকেজ নম্বর ৩ এর পৃথক পৃথক দুইটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৯৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যায়ে ১ নম্বর প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করবে শামিম এন্টারপ্রাইজ। এবং ৩ নং প্যাকেজ ১৯৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করবে তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড।’ অতিরিক্ত সচিব আরো বলেন, ‘বৈঠকে এনইপিসি কনসোর্টিয়াম পাওয়ার লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত হরিপুর ১১০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল ভিত্তিক বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরো দুই বছর বিদ্যুৎ ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আরো দুই বছর বিদ্যুৎ ক্রয় করা হবে। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৫ টাকা ৪৪ পয়সা।’ এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মার্চ ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ