জাতীয়

প্রাণের উৎসব ঘিরে প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে

আবু বকর ইয়ামিন : বছর ঘুরে আবারো দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। সপ্তাহ ফুরালেই নতুন বছরের প্রথম দিন- পহেলা বৈশাখ। দিনটি বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার দিন, উৎসবের দিন। এই উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব। অতীতের সব আঁধার পেছনে ফেলে মানুষকে মঙ্গলের দিকে আসার আহ্বান জানিয়ে বাংলা সনের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার শোভাযাত্রাকে সার্থক ও সুন্দর করে তুলতে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ জুড়ে। স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী গত ১৫ মার্চ এ প্রস্তুতি কাজের উদ্বোধন করেন। চারুকলার নবীন, প্রবীণ সব শিক্ষার্থীর রঙ তুলিতে রঙিন হয়ে উঠছে মাটির সরা, হাঁড়ি, পুতুল, মুখোশ। এর মধ্যে এগুলোর বেচা কেনাও শুরু হয়ে গেছে। আর বিক্রিত অর্থ দিয়ে উদযাপিত হবে এ উৎসব। বাউল সম্রাট লালন শাহের কালজয়ী গান ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি,’ এই প্রতিপাদ্য নিয়েই উদযাপিত হবে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত ২৯ তম মঙ্গল শোভাযাত্রা। সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে বাংলা ১৪২৫ সনের প্রথম দিনে। শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে এবার নেতৃত্বে রয়েছেন চারুকলার ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবারের মতো এবারো মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন ধরনের প্রতিকৃতি। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে এসব তৈরিতে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন। চলছে সঙ্গীতের মূর্ছনা ও আড্ডা। চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে ঢুকতেই চোখে পড়ে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা। নিরলস পরিশ্রম। নানারকম ছবি আঁকছেন তারা। যার যার ওপর অর্পিত কাজ নিয়ে প্রত্যেই পুরোদমে ব্যস্ত। কেউ ছবি আঁকছেন, কেউ মুখোশ গড়ছেন, কেউ বা আবার হাঁড়ি-পাতিলের ওপর কারুকাজ করছেন। সেগুলোই কিছুক্ষণ পর টাঙানো হচ্ছে দেয়ালে। চমৎকার এসব শিল্পকর্ম অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে তুলেছে পুরো চারুকলা প্রাঙ্গণকে। চারুকলা ২০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাসেল বলেন, ‘প্রতিবছর সিনিয়র ব্যাচ এ আয়োজনে নেতৃত্ব দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় আমরাও এবার নেতৃত্ব দিচ্ছি। আর তো বেশিদিন নেই। তাই পুরো প্রস্তুতি শেষ করতে সবাই মিলে রাত-দিন কাজ করছি। এক্ষেত্রে জুনিয়ররা আমাদের সহযোগিতা করছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সার্থক করতে আমরা পুরোটা ঢেলে দিতে প্রস্তুত।’ নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন। আমরা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট। আশা করছি আয়োজন শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা আন্তরিকতার সঙ্গে এ নিরাপত্তা দিয়ে যাবেন।’ শিক্ষার্থীদের তৈরি মোটিভগুলো যাতে সাধারণ মানুষ কিনতে পারেন সে জন্য এই আয়োজন উন্মুক্ত থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবার নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন কেমন তা দেখার জন্য যাত্রাবাড়ী থেকে পরিবারসহ ঘুরতে এসেছেন বেসরকারি কর্মকর্তা সোলাইমান। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি বছরই চারুকলায় আসি। এখানে এলে গ্রামের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। তাছাড়া পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে এসে সুন্দর এই আয়োজনকে দেখে খুবই ভালো লাগছে। আর পহেলা বৈশাখেও আসব বলে আশা করছি।’ বৈশাখী আয়োজন দেখার জন্য দেশ-বিদেশের অনেকেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন। বিদেশিরা ‘শুভ নববর্ষ' বলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালন ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ এ আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ এপ্রিল ২০১৮/ইয়ামিন/শাহনেওয়াজ