জাতীয়

‘সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল অ্যাক্ট’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, বাকস্বাধীনতা বা স্বাধীন সাংবাদিকতা বন্ধ করতে নয়, মূলত সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল অ্যাক্ট করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কিছু ধারার বিষয়ে এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা বেশকিছু আপত্তির কথা জানিয়েছেন। সেগুলো তারা আমাদের সামনে পেশ করেছেন। এসব অ্যাক্ট নিয়ে আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলাপ হয়েছে। আলোচনা শেষে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, যে আপত্তিগুলো আজ তুলে ধরা হলো সেগুলো অনেকাংশেই যৌক্তিক। তিনি বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল অ্যাক্ট করা হয়েছিল, বাকস্বাধীনতা কিংবা স্বাধীন সাংবাদিকতা বন্ধ করার জন্য নয়। সে ক্ষেত্রে যদি এ আইনে ত্রুটি থেকে থাকে কিংবা কোনো দুর্বলতা থাকে সেগুলো যেন অপসারণ করা যায়। সেই আলোকে এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা। আলাপ- আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুই পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি যে, তাদের (এডিটরস কাউন্সিল) যে উদ্বেগ সেগুলো আমরা দূর করতে পারব। মন্ত্রী আরো বলেন, আজ আমরা প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে বসেছি। পরবর্তীতে এ নিয়ে টেলিভিশনের সঙ্গেও আমরা প্রয়োজনে বসব। আসলে আমরা এমন একটা আইন করতে চাই যেটা শুধু গ্রহণযোগ্য নয়, যুগোপযোগী হবে। ‘প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টটি এখন আইসিটি মিনিস্ট্রি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। আগামী ২২ তারিখে এর ওপর সভা হবে। ওই সভায় এডিটরস কাউন্সিলকে যেন ডাকা হয়, এ রকম একটা প্রস্তাব থাকবে। ২২ তারিখের পর যেকোনো একটা সময়, একটা নির্ধারিত তারিখে যে আপত্তি বা উদ্বেগ আজ এডিটরস কাউন্সিল জানিয়েছে, সেগুলো লিখিত আকারে উনারা স্থায়ী কমিটিকে দেবেন’, বলেন আনিসুল হক। আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।  এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মাদ শহিদুল হক, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউজ টু ডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদসহ দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে এডিটরস কাউন্সিলের সেক্রেটারি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারার বিষয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছি। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারায় আমাদের আপত্তি। আমরা এ ধারাগুলোকে মনে করেছি বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। বাংলাদেশে যে স্বাধীন সাংবাদিকতা, সেটা নিয়ে আমরা খুবই গর্ববোধ করি। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গভীরভাবে ব্যাহত করবে। এ বিষয়গুলো আমরা মন্ত্রীদের বুঝিয়েছি এবং তারা বিষয়গুলো সানন্দে গ্রহণ করেছেন।’ ‘আমরা আশা করি, যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি প্রণয়ন হবে, সেটা সত্যিকার অর্থে সাইবার ক্রাইমকেই প্রতিহত করবে। সাংবাদিকতার কোনো স্বাধীনতা খর্ব করবে না। আমরা এটা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে একটা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োজন। কেননা এখন যে ধরনের সাইবার ক্রাইম হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া, অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন মিডিয়া- এগুলো আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। তাই আইনটি হোক। তবে যেন সেটা সুষ্ঠু হয়। আসলেই সেটা যেন তার পারপাস সার্ভ করতে পারে’, বলেন মাহফুজ আনাম। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ এপ্রিল ২০১৮/নঈমুদ্দীন/রফিক