জাতীয়

বিশ্ব ধরিত্রি দিবস

শাহ মতিন টিপু : আজ বিশ্ব ধরিত্রি দিবস। পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য রাখতে প্রতিবছর ২২ এপ্রিল এই দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বকে দূষণমুক্ত ও সুন্দরভাবে  গড়ে তুলতে ১৯৬৯ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ইউনেস্কোর সভায় দিনটির সূচনা করেন শান্তিদূত জন ম্যাককনেল। তখন ২১ মার্চ দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ১৯৭০ সালে মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন ও ডেনিস হেইসের উদ্যোগে প্রতি বছর ২২ এপ্রিল দিনটি পালন করা হয়। বিশ্বের ১৯২টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়। এই বছর দিবসটিতে প্লাস্টিকের দ্বারা সৃষ্ট দূষণ এবং এর ব্যবহার শেষ করার জন্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়াকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পলিথিন ও প্লাস্টিক এবং পলিমারজাত অন্যান্য বস্তু সামগ্রী পচনশীল নয়, তাই বর্জ্য পলিথিন ও প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বস্তুগুলিকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে নষ্ট করা দরকার। এই প্রক্রিয়াটি যথেচ্ছ ভাবে না করে নিয়ন্ত্রিতভাবে করা দরকার, কারণ এর ফলে আবার পরিবেশ দূষিত হয়। পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে কোনো না কোনো স্থানে ফেলে দেওয়া চিপসের প্যাকেট, কিংবা প্লাস্টিকের বোতল তার গন্তব্য হিসেবে খুঁজে নিচ্ছে সমুদ্রকে। তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে সেই এলাকার জীবন আর প্রকৃতিকে। ভয়ানকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশে থাকা জীবেরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, সামুদ্রিক পাখিদের প্রায় নব্বই শতাংশ সরাসরি প্লাস্টিক দূষণের শিকার। ষাটের দশক থেকেই সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় পাখিদের উপর প্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে জরিপ চালানো হয়। ষাটের দশকে পরিমাণ ছিলো পাঁচ শতাংশেরও কম পাখির পাকস্থলীতে পাওয়া যেত প্লাস্টিক। আশি আর নব্বইয়ের দশকে শিল্প কারখানায় প্লাস্টিক উৎপাদন সহজলভ্য হওয়ার পাশাপাশি কপাল পুড়েছে পাখিদেরও। কিছু গবেষণা বলছে, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি সামুদ্রিক পাখির পাকস্থলীতেই পাওয়া যায় প্লাস্টিক। অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর তুলনায় পাখির আকার ছোট হওয়ায় গবেষণায় এমন ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে কিনা, এমনটাও প্রশ্ন থেকে যেতে পারে! পাশাপাশি পাখির পাকস্থলীতে মাত্রাতিরিক্ত প্লাস্টিককণিকার উপস্থিতির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে পাখির বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাস এবং কৌতূহলী আচরণের পাশাপাশি সমুদ্রে ভাসমান প্লাস্টিক বর্জ্যও যে দায়ী- সে ব্যাপারে পরিবেশবিদদের সন্দেহ নেই। পৃথিবীজুড়ে প্লাস্টিক সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিত্যাগ নিয়ে বরাবরই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।  কোমল পানীয় থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের বোতল তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক দিয়ে। শুধু ২০১৬ সালেই ১১০ বিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল বানিয়েছে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কোমল পানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা। আর এই বোতলের বেশিরভাগই উন্মুক্তভাবে পরিবেশে পরিত্যাগ করেছেন ভোক্তারা। তাই অনেক পরিবেশবিদের দাবি, এখনই যদি প্লাস্টিক বোতলের বিকল্প না চিন্তা করা যায় তবে মানবজাতির সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ এক দুর্যোগ। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছেন, কীভাবে পরিবেশে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে আনা যায়। আর প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়েও গবেষণাগারে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ চলছে। আবিষ্কৃত হয়েছে পরিবেশে পচনশীল বায়োপ্লাস্টিকও। কিন্তু সেই প্লাস্টিক উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে পরিবেশের উপরও প্লাস্টিকজনিত বর্জ্যের চাপ কমছে না। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য প্রকৃতিকে বাসযোগ্য করে যেতে হলে অবিলম্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে, সমুদ্র কিংবা যেকোনো জলাশয় থেকে প্লাস্টিক অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে, বায়োপ্লাস্টিক উৎপাদনের খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় মানবজাতির জন্য অপেক্ষা করছে বিশাল এক দুর্যোগ। আমাদের পূর্ববর্তীরা আমাদের কল্যাণে যে দায়িত্ব পালন করে গেছেন সে দায়িত্ব ধারাবাহিক করা আমাদের কর্তব্য। কবি সুকান্তের মত আমাদেরকেও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আমরাও যেন আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে দিয়ে যেতে পারি। আর্থ ডে অর্থাৎ বিশ্ব ধরিত্রি দিবস উদযাপনে এবারও গুগলে চমৎকার অ্যানিমেটেড ডুডল সংযোজিত হয়েছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ এপ্রিল ২০১৮/টিপু