জাতীয়

কবি বেলাল চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রয়াত কবি বেলাল চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন সর্বস্তরের মানুষ। বুধবার বেলা ১১টা ৬ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে কবির মরদেহ নিয়ে আসা হয়। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আব্দুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিলসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সেক্টর কমান্ডার ফোরামের কে এম শফিউল্লাহ, সাংবাদিক হারুন হাবিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল চৌধুরী, ইউজিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা ধারাবাহিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ যৌথভাবে এই শ্রদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।  

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস জানান, দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সংঠনের পক্ষ থেকে কবির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। পরে জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে কবির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। কবিকে দাফনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর শর্শদি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে কবির দাফন সম্পন্ন হবে। ষাটের দশকের অন্যতম শীর্ষ কবি বেলাল চৌধুরী মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১ মিনিটে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি, ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১ নভেম্বর কবিকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সাড়ে পাঁচ মাস ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত শুক্রবার থেকে ছিলেন লাইফ সাপোর্টে।  

কবি বেলাল চৌধরী একাধারে কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক। তিনি লেখালেখির পাশাপাশি পেশাগতভাবে সাংবাদিকতায় ছিলেন দীর্ঘকাল। ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের পত্রিকা ‘ভারত বিচিত্রা’ সম্পাদনা করেন ১৫ বছর। দীর্ঘদিন কলকাতায় অবস্থানকালে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাহিত্য পত্রিকা ‘কৃত্তিবাস’ সম্পাদনা করেন। সেখানে আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। ঢাকায় দৈনিক রূপালী গ্রুপের পত্রিকা সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ সম্পাদনা করেন। কবি বেলাল চৌধুরী ১৯৩৮ সালের ১২ নভেম্বর ফেনী জেলার শর্শদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রফিকউদ্দিন আহমাদ চৌধুরী এবং মাতার নাম মুনীর আখতার চৌধুরানী। কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ গ্রন্থসহ বেলাল চৌধুরীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২২টি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে, নিষাদ প্রদেশে (১৯৬৬), বেলাল চৌধুরীর কবিতা (১৯৭৬), আত্ম প্রতিকৃতি, স্থির জীবন ও নিসর্গ (১৯৭৬), স্বপ্নবন্দী, সেলাই করা ছায়া, জলবিষুবের পূর্ণিমা (১৯৮৬), প্রতি নায়কের স্বগতোক্তি, (১৯৮৭), যাবজ্জীবন সশ্রম উল্লাস (১৯৯৭), বত্রিশ নম্বর (১৯৯৭), ভালবাসার কবিতা (১৯৯৭), যে ধ্বনি চৈত্রে শিমূলে প্রভৃতি। সাহিত্যে অবদানের জন্য কবি বেলাল চৌধুরী রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশের পদক (২০১৪), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), মাযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার লাভ করেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৮/ইয়ামিন/এসএন