জাতীয়

মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাদক ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যারা মাদক গ্রহণ করেন তারা সরে আসবেন, খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি ছেড়ে দেবেন। আশা করব, ডিলার ও চোরাকারবারিরাও চোরাচালান বন্ধ করে দেবেন। যাদের কাছে অবিক্রিত ড্রাগ রয়েছে তারা আমাদের ক্যাম্পের আশপাশে সেসব ফেলে যাবেন, তাহলে আপনাদের জন্য ভালো হবে। মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর সাঁড়াশি অভিযান চালানোর আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ মে র‌্যাব বিশেষ অভিযান শুরু করে। গত ৯ দিনে র‌্যাবের বিশেষ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১ হাজার ৪১৫ জন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ২০ লাখ টাকার বেশি আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে এবং ১৫ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ৩৮১ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেনজীর আহমেদ বলেন, আমাদের এ বিশেষ অভিযান হবে মূলত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে। অনস্পট অপারেশনের মাধ্যমে মাদক বিক্রেতা ও গ্রহিতাদের সাজা দেওয়া হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিত আইনেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন ম্যাজিকের মতো নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বলছি না, তবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করি। জঙ্গি ও মাদক আর দশটা অপরাধের মতো নয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান থাকবে, মাদক ব্যবসায়ীরা যেন আইনের ফাঁকফোকরের সুবিধা ব্যবহার করতে না পারে। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন আরো কঠোর ও দ্রুত হালনাগাদ করে প্রণয়ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মাদক পরিবহনে গণপরিবহনের পাশাপাশি অনেক সরকারি-বেসরকারি গাড়ি ব্যবহৃত হয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাড়ি কোন কাজে ব্যবহৃত হয়, মালিকরা বিষয়টা খেয়াল রাখবেন। মাদক ব্যবসায়ীদের সমন্বিত তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে, সেটা নিয়েও কাজ করার কথা জানান র‌্যাবেব ডিজি। মাদক নিয়ন্ত্রণে চাহিদা ও যোগান দুই জায়গাতেই কাজ করতে হবে, জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্যাটা অনেক পুরনো। ধৈর্য্যসহ ফোকাস করতে পারলে এটা কমিয়ে আনা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, যদি কোনো বাহিনীর সদস্য মাদকের কোনো স্তরে জড়িত থাকেন, আশা করব, তারা সতর্ক হবেন, এ পথ থেকে সরে আসবেন। র‌্যাবের কোনো সদস্য মাদককে সাপোর্ট করে, এমন কোনো ঘটনা নেই। তিনি বলেন, এটা কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকেন্দ্রিক অভিযান নয়, সামগ্রিক অভিযান। কাউকে বাদ দিয়ে নয় এবং কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। যারা জড়িত সবার বিরুদ্ধে অভিযান বলবৎ থাকবে। গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মাদকের স্থান বা জড়িত ব্যক্তির বিষয়ে আপনারা প্রচার করুন, আমরা সেখানে যাব। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা চলছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্ষণ করা হলে র‌্যাবেব ডিজি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্টিকরণের পর আমাদের আর স্পষ্টিকরণের দরকার আছে বলে মনে হয় না। আশা করব, অপরাধীদের কেউ আশ্রয় বা প্রশ্রয় দেবেন না। র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর গত ১৪ বছরে ৬৮ হাজার ৪৯৮ জন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মে ২০১৮/নূর/রফিক