জাতীয়

মা দিবসে মা-বানরের ভাইরাল ছবিটি আইমান নকিবের তোলা

হাসান মাহামুদ : দেয়ালের ওপর বাচ্চা কোলে বসে আছে মা-বানর, পাশে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল এক মা নিজের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দেখছেন তাদের। এমনই প্রেক্ষাপটের একটি ছবি এবারের বিশ্ব মা দিবসে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখান থেকে ছবিটি প্রকাশও হয় বেশকিছু মিডিয়া ও ব্লগে ফটোক্রেডিট ছাড়া। আলোচিত এই ছবিটি শেরপুরের এক তরুণের তোলা। সৌখিন এই ফটোগ্রাফারের নাম আইমান নকিব। মা দিবসে অন্যসব পোস্ট বা ছবিকে ছাপিয়ে বেশ সাড়া ফেলে ছবিটি। কিন্তু ফটোগ্রাফারের নাম কেউ প্রকাশ না করায় এবং ফটোক্রেডিট দিয়ে শেয়ার না হওয়ায় মূল কারিগর থেকে যান আড়ালে। ছবিটি কার তোলা তা জানতেও অনেকে পোস্ট দেন ফেসবুকে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান আজ সোমবার ছবিটি শেয়ার দেন, তাতে লেখা ছিল, ‘কে তুলেছে জানি না! এই ছবি দুনিয়ার সেরা ছবির একটা হওয়া উচিত!’ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক বিকেলে শখ করে আম্বরখানার ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই রোডে অবস্থিত চাষনি পীরের মাজারে এই মনোরম দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি নিজের ফেসবুক পেজে আপলোড করেন তিনি। তখন বেশ সাড়া ফেলেছিল ছবিটি। দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার ছবিটি শেয়ারও করেন তখন। গতকাল রোববার ছিল বিশ্ব মা দিবস। এদিন ছবিটি রীতিমতো ভাইরাল হয়। এ বিষয়ে আইমান নকিব রাইজিংবিডিকে বলেন, গত বছর আমি সেখানে গিয়েছিলাম ছবি তুলতেই। হঠাৎ ব্যাপারটা নজরে পড়ে তখনই এই ছবিটি তোলা। একটা মা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে মাজারে এসেছিলেন। তিনি নিজের বাচ্চাকে বানর দেখাচ্ছিলেন, সেই বানরটার কোলেও বাচ্চা ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছিল, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসার একটি প্রতীক হতে পারে মুহূর্তটি। তিনি বলেন, এ রকম মুহূর্ত খুব কমই আসে একজন ফটোগ্রাফারের জীবনে। এই ছবিটা যে এত মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে, এত মানুষের স্নেহ-ভালবাসা পেয়েছি এই ছবিটার জন্য, তা সত্যিই অনেক বড় প্রাপ্তি। যদিও আমি এখনো ফটোগ্রাফার হয়ে উঠতে পারিনি, চেষ্টা করে যাচ্ছি। আইমান নকিবের ফটোগ্রাফার হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটিও খুব মজার। আইমান নকিব এ বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন। ছবি তোলার আগ্রহ মূলত ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু সেভাবে কখনো ডিভাইসের অভাবে তোলা হয়ে ওঠেনি। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার মা’ই একটি ডিজিটাল ক্যামেরা গিফট করে তাকে। সেটা দিয়েই টুকটাক ছবি তুলত সে। ফটোগ্রাফি শুরুর করার হাতেখড়ি বলতে গেলে তখন থেকেই। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন। এরপর ওই বছরের আগস্টের দিকে টিউশনির টাকা জমিয়ে একটা ডিএসএলআর কেনেন। আর তখন থেকেই মূলত ভালভাবে ফটোগ্রাফি শুরু। এরই মধ্যে ফটোগ্রাফিতে বেশকিছু অর্জন হয়েছে আইমান নকিবের। পেয়েছেন বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননা। অস্ট্রেলিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক জেফ মিচেলের চলচ্চিত্র ‘রিজন্স অ্যান্ড এনডিংস’-এ ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি বাংলাদেশ পার্ট হিসেবে কাজ করেছেন এ বছর। ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফিক ফোরাম অ্যাওয়ার্ড ‘মনসুন’ থিমে পেয়েছেন দ্বিতীয় পুরস্কার। ব্লাস্ট আয়োজিত ‘মাই লাইফ মাই রাইটস’ প্রতিযোগিতায়ও পান দ্বিতীয় পুরস্কার। মাকে নিয়ে তোলা আলোচিত সেই ছবিটার জন্য শখের ছবিয়াল আয়োজিত ফটোগ্রাফি এক্সিবিশনে পুরস্কার পান তিনি। ফটোগ্রাফি তার জীবনে কিছু সম্মানও বয়ে এনেছে। সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আয়োজিত ‘প্রথম আন্তঃসিলেট ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন’এ তাকে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় চলতি বছর। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মে ২০১৮/হাসান/মুশফিক