জাতীয়

সব কর্মপরিকল্পনায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক : দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের স্বার্থে সব কর্মপরিকল্পনায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। মঙ্গলবার সংগঠনটির কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে ‘দারিদ্র্য বিমোচনে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ আহ্বান জানান। সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। ‘জীববৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়ন’ এবং ২০১০ সালে ‘জীববৈচিত্র্য, উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন’ এ দুটি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ দিবসটি পালন করা হয়। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্য-১ হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন, যা খাদ্য নিরাপত্তার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। জীববৈচিত্র্য হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠির চাহিদার ৮০ শতাংশ আসে জৈব সম্পদ থেকে। জীববৈচিত্র্য টেকসই উন্নয়ন ও মানবকল্যাণের জন্য অপরিহার্য। বক্তারা বলেন, বন ও বন্যপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিবেশ, প্রতিবেশ ব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্যের ওপর নেমে আসে বিপর্যয়। বন্যপ্রাণীর জীবনযাপন যেমন বনের ওপর নির্ভরশীল, তেমনই বনের স্বাভাবিক ভারসাম্যও বন্যপ্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে প্রায় ৯৮২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিচরণ করে। এর মধ্যে ৫৩ প্রজাতির উভচর, ১৫৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬৫০ প্রজাতির পাখি এবং ১২১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। বক্তারা বলেন, প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস। রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের জাতীয় পশু এবং সুন্দরবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রায় ১২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের ৪র্থ প্রাণবৈচিত্র্য অবস্থানপত্র অনুযায়ী সুন্দরবনে ২০০৪ সালে ৪৪০টি, ২০০৬ সালে ২০০টি বাঘ ছিল। ২০১৫ সালে বাঘের সংখ্যা মাত্র ১০৬টি। গত ৫০ বছরে সুন্দরবন থেকে ৩২ প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। আইউসিএন লাল তালিকা ২০০০ অনুযায়ী, গত ১০০ বছরে ১৩টি বন্যজীবী প্রজাতি হারিয়ে গেছে। আইইউসিএন লাল তালিকা ২০১৫ অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে আরো ১৮ প্রজাতি বিলুপ্ত তালিকায় যুক্ত হয়েছে। যা আমাদের জন্য একটি অশনিসংকেত। বক্তারা বলেন, দেশের ৩০০টির বেশি নদীর মধ্যে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৭টি। যুগ যুগ ধরে এ দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা আবর্তিত হচ্ছে নদীকে কেন্দ্র করে। বছরে ১ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন পলি নদীবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, বাঁধ নির্মাণসহ উজানে পানি প্রত্যাহারের ফলে পলিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশের নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। দেশের প্রায় ১৪০টি নদ-নদী এখন মৃতপ্রায়। দেশের প্রায় ১৩টি নদীর অস্তিত্ব এখন বিলীনের পথে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২০ প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরো ৪৫ প্রজাতির মাছ হুমকির সম্মুখীন। বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. লেলিন চৌধুরী, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, বিআইডব্লিউটিএর প্রাক্তন নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, নিরুপমা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজনীন নিরুপমা তিথি প্রমুখ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৮/হাসান/রফিক