জাতীয়

শেখ হাসিনাকে ডি. লিট ডিগ্রি দিয়েছে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

রাইজিংবিডি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) ডিগ্রি প্রদান করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক এই ডিগ্রি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী বলেন, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ গঠন এবং গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে  অসাধারণ ভূমিকা রাখায় শেখ হাসিনাকে  এ সম্মানে ভূষিত করা হলো। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং দুদেশের শিক্ষাবিদ, কবি, শিল্পি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দু’দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভারতে দু'দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন  শেখ হাসিনা।  শুক্রবার শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।  সেখানে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর শনিবার আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা।  তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকলকে ক্ষুদ্র স্বার্থ ও সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে ওঠার এবং মানুষ হিসেবে মর্যাদার উন্নয়নে নজরুলের শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মানবজাতির একজন সদস্য হিসেবে প্রত্যেককেই কেবল নিজের কর্মস্থলেই নয় বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবতার মর্যাদা সবার উপরে তুলে ধরতে হবে।’ কবির জন্মদিনের কবির জন্মস্থানে আসতে পেরে এবং কবির নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি গ্রহণ করতে পেরে শেখ হাসিনা গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। ‘আমি মনে করি এই সম্মান কেবলমাত্র আমার একার নয় বরং এই সম্মান বাংলাদেশের জনগণের’-উল্লেখ করে তিনি ডিগ্রি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা সাহিত্য আকাশে বিদ্রোহী কবি নজরুলের আগমন ঘটেছে ধুমকেতুর মতো। নজরুল ছিলেন কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীত রচয়িতা, সঙ্গীতজ্ঞ, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, নাট্যকার অভিনেতা, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সৈনিক, তিনি বাংলা সাহিত্যকে মূল্যমান সম্পদে সমৃদ্ধ করেছেন। বৃটিশ শাসকদের বাংলা ভাগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাগ হলেও নজরুল ভাগ হননি। এ কারণেই আমরা দেখছি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ দু’জায়গায়ই নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নজরুলের সাহিত্যকর্মে সর্বদাই ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবতার বার্তা প্রতিফলিত হয়েছে। নজরুল এক হাতে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় ধর্মীয় বার্তা পৌঁছে ইসলামিক হামদ্-নাত লিখেছেন এবং আরেক হাতে শ্যামা সঙ্গীত বৈষ্ণব গান রচনা করেছেন, সুর দিয়েছেন এবং এই অসাধারণ সৃষ্টির মাধ্যমে হিন্দু ধর্মীয় বার্তা সাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। নজরুলের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ বয়সের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফরিদপুরে নজরুলের সাক্ষাত ঘটে। বঙ্গবন্ধু তার জয়বাংলা স্লোগান নজরুলের কবিতা থেকে নিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দুই স্বল্পায়ু ব্যক্তিত্বের চরিত্রের বেশ মিল রয়েছে। একজন ছিলেন সাহিত্যের কবি অন্যজন ছিলেন রাজনীতির কবি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং নজরুল চিন্তা ও আদর্শে একই ছিলেন এবং উভয়ই শোষণ, বঞ্চনা মুক্ত একটি স্যেকুলার সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন এবং তারা স্বৈরাচারী শাসকের কাছে মাথা নত করেননি বরং তারা কারাবরণ করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জনগণের সৌভাগ্য এই যে, তারা বঙ্গবন্ধু ও নজরুলের মতো দুই মহান কবিকে পেয়েছে। তারা কেবলমাত্র বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করেনি তারা আমাদের জীবন ও মূল্যবোধে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, বাঙালি এই দুই কবির কাছ থেকে সম্ভবত নিজেদের চরিত্রের কমনীয়তা ও দ্রোহের সংমিশ্রন লাভ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, নজরুল জন্মেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায়। কিন্তু তিনি ধারণ করেছেন গোটা বাংলাকে। তিনি তার শৈশব কাটিয়েছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে। পরে নজরুল বাংলাদেশের অনেক সাহিত্য সম্মেলন ও রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিয়েছেন এবং কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর এবং অন্যান্য স্থানে কাটিয়েছেন এবং স্থানীয় জনগণের সংস্পর্শে এসেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং তার চিকিৎসা ও বাংলাদেশে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং তাকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। নজরুলের বিখ্যাত ‘চল্ চল্ চল্/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ গানটি বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে। মৃত্যুর পর নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সমাহিত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে নজরুলের জীবন ও কর্ম নিয়ে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কবি ঢাকায় যে বাড়িতে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন সেই বাড়িটিতে নজরুল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠান কবির স্মৃতি সুরক্ষায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে, তাঁর জীবন, সাহিত্য, সঙ্গীত এবং অন্যান্য সাহিত্য কর্ম নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, নজরুল বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে এবং দেশে ও বিদেশে নজরুলের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে প্রচার ও প্রকাশনা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রেও ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের মত সৌভাগ্যবান নয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পথযাত্রা স্বাধীনতার পর থেকে বারবার বিঘিœত হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলায় তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে সমৃদ্ধ হবে। প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সেই সমস্যাগুলো অমিমাংসিত রাখা উচিত নয়। তিনি বলেন, আমাদের জনগণের কল্যাণের কথা ভাবা উচিত। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের কবল থেকে যুবকদের রক্ষা করার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তথ্যসূত্র : বাসস রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মে ২০১৮/এনএ