জাতীয়

ভাষাসৈনিক হালিমা খাতুন আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভাষাসৈনিক, সাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. হালিমা খাতুন আর নেই। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় সূচিত হয়েছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেদিন যাদের সাহসী পদক্ষেপ এনে দিয়েছে আমাদের মায়ের ভাষা, তাদেরই একজন ছিলেন অধ্যাপক ড. হালিমা খাতুন। হালিমা খাতুনের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, রক্তদূষণের মতো নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে শনিবার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আজ তিনি মারা যান। হালিমা খাতুনের একমাত্র মেয়ে দেশের অন্যতম আবৃত্তিশিল্পী প্রজ্ঞা লাবণী। এই ভাষাসৈনিকের মৃত্যুতে সারা দেশের মতো তার জন্মস্থান বাগেরহাটেও বিরাজ করছে শোকাতুর পরিবেশ। অধ্যাপক ড. হালিমা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ আগস্ট বাগেরহাট জেলা সদরের বাদেকাড়াপাড়া গ্রামে। বাবা মৌলভী ও হাফেজ শেখ আবদুর রহিম ও মা দৌলতুন নেসা। বাবা ছিলেন তৎকালীন গুরু ট্রেনিং স্কুল বর্তমান প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং স্কুলের (পিটিআই) শিক্ষক। নিজে শিক্ষক হওয়ায় তার সাত মেয়ে ও এক ছেলেকে শিক্ষিত করে তুলতে কোন আপস করেননি তিনি। হালিমা খাতুনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাগেরহাট শহরতলীর বাদেকাড়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর মনমোহিনী গার্লস স্কুল বর্তমানে বাগেরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন বাগেরহাট প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ বর্তমানে সরকারি পিসি কলেজে। সেখান থেকে ১৯৫১ সালে বিএ পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে ইংরেজিতে এমএ এবং পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্দান কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে খুলনা করোনেশন স্কুল এবং আরকে গার্লস কলেজে শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা। এরপর কিছুদিন রাজশাহী গার্লস কলেজে অধ্যাপনার পর যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে কাটে তার জীবনের অধিকাংশ সময়। সেখান থেকে ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। জাতিসংঘের উপদেষ্টা হিসেবে ২ বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৭ সালে দুই বছরের জন্য সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ভাষা আন্দোলনে অনন্য অবদানের জন্য শিল্পকলা একাডেমি তাকে ভাষা সৈনিক সম্মাননা প্রদান করে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৮/হাসান/সাইফ