জাতীয়

‘নৌ খাতও মাফিয়াচক্রের নিয়ন্ত্রণে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক পরিবহন খাতের মতো নৌ পরিবহন খাতও মাফিয়াচক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এদের কারণেই পিনাক-৬ ডুবির এর মতো ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হয়নি। এই খাতে দেদারছে ঘুষ- দুর্নীতি চলছে। এই মাফিয়াচক্রকে উৎখাত ও গ্রেপ্তার করতে না পারলে আধুনিক, জনবান্ধব ও নিরাপদ নৌ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে না। শনিবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে এক আলোচনা সভায় রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞসহ বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমএল পিনাক-৬’ ট্রাজেডির চার বছরপূর্তি উপলক্ষে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সঞ্জীব বিশ্বাস। আলোচনা করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট শ্রমিকনেতা মনজুরুল আহসান খান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মীর তারেক আলী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রাক্তন সচিব মাহাবুবুল আলম, প্রাক্তন পরিচালক এমদাদুল হক বাদশা ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তাসনীম রানা। পিনাক-৬ দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট ও দুর্ঘটনা-পরবর্তী গৃহীত সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে সূচনা বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। মনজুরুল আহসান খান বলেন, যে সময় আমরা পিনাক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণ ও নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কথা বলছি, সে সময় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করছে। সড়ক পরিবহন খাতের মতো নৌ পরিবহন খাতও মাফিয়াচক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এদের কারণেই পিনাক-৬ এর মতো ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনার চার বছরেও প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হয়নি। মাফিয়াচক্রকে উৎখাত ও গ্রেপ্তার করতে না পারলে আধুনিক, জনবান্ধব ও নিরাপদ নৌ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে না। মীর তারেক আলী বলেন, নৈরাজ্য শুধু সড়কেই নয়, নৌ পরিবহন খাতেও ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, ঘুষ ও দুর্নীতি চলছে। নৌযানের নকশা অনুমোদনের জন্য মালিকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। নৌযানের নিবন্ধন ও ফিটনেস পরীক্ষার জন্য শিপ সার্ভেয়ারদেরকে ঘুষ দিতে হয়। মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় ঘুষের বিনিময়ে প্রার্থীরা পাস করেন। অধিকাংশ নৌদুর্ঘটনার পরই যথাযথ তদন্ত হয় না, প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ শনাক্ত হয় না। পিনাক-৬ দুর্ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অধিকাংশ তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না, দোষীদের শাস্তি হয় না। ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট পদ্মা নদীতে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় ‘এমএল পিনাক-৬’ লঞ্চ। সরকারি হিসেবে ওই দুর্ঘটনায় ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অবশ্ বেসরকারি হিসেবে বলা হয়েছে, লাশ উদ্ধার করা হয় ৮৬ যাত্রীর। নিখোঁজ থাকে ৫৩ জন, যাদের হদিস আজও মেলেনি। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ আগস্ট ২০১৮/সাওন/রফিক