জাতীয়

‘আইনে সড়ক দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তার বহুমাত্রিকতা স্থান পায়নি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত সড়ক আইনে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক নিরাপত্তার বহুমাত্রিকতা স্থান পায়নি। বুধবার রাজধানীতে প্ল্যানার্স টাওয়ারে ‘প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন ও সড়ক নিরাপত্তা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) নেতারা এ তথ্য জানান। তারা বলেন, সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগরী ব্যক্তি, বাস মালিক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাজনিত দায়মুক্তির সুযোগ রয়েছে। তাই এসব অনুষঙ্গগুলোকে বাদ দিয়ে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করা আদৌ সম্ভব নয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য রাখেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। বিপিআই’র সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালামের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান, বতর্মান সহ-সভাপতি অধ্যাপক আজগর মাহামুদ, যুগ্ম সম্পাদক মাজহারুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।  সভাপতি আবুল কালাম বলেন, শুধু আইন করেই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য সুষ্ঠু এবং পরিকল্পিত সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলতে হবে। বিশেষ করে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিআরটিএর সেবার বিকেন্ত্রীকরণ প্রয়োজন। প্রস্তাবিত আইনের নানা বিষয় ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল বলেন, আমরা নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক দাবিকে সমর্থন করি। শিক্ষার্থীদের এই দাবিকে নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার মনে করি এবং সারা দেশে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে সকলে জন্য নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত আইনে হত্যার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট গাড়ি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটিতে কারা থাকবেন তার বিশেষ বর্ণনা অনুপস্থিত। এই তদন্ত কমিটিতে উপযুক্ত কারিগরি লোক নিশ্চিত না করা গেলে হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। আইনে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করা এবং দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য স্বতন্ত্র সেল গঠন করা প্রয়োজন। আইনের বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রণয়নের জন্য অচিরেই বিধিমালা প্রণয়ন করা দরকার। সড়কে নারী নিরাপত্তাসহ বিশেষ ইস্যুতে আলাদা বিধিমালা প্রণয়ন দরকার। প্রস্তাবিত আইনে কোন দুর্ঘটনায় ‘গুরুতরভাবে কোন ব্যক্তি আহত হলে’ শব্দটি আইনের প্রয়োগে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরি করে দেবে। তাই শব্দটি বাতিল করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত ট্রাফিক মনিটরিং সেল এবং বিশেষ ট্রাফিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন। আদিল বলেন, দেশের গাড়ির গতিসীমা সম্পর্কিত কোন আইন নেই। দেশের বিভিন্ন সড়কের জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর আইনি কাঠামো ও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য চালক ও সহযোগীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য নিয়মিতভাবে চালক ও সহযোগীদের বাৎসরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক। চালকদের মাদকাসক্তির কারণে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। মাদকাসক্ত চালকদের চিহ্নিত করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। গাড়ি চালানো একটি বিশেষায়িত পেশা বিবেচনায় নিয়ে গাড়ি চালকদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত যা তার মানসিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে। যানবাহন শ্রমিকদের সুন্দর জীবন নিশ্চিত না করে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রস্তাবিত আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ মেরিট পয়েন্টের বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে। আইনের সঠিক বাস্তবায়ন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলের ধারার সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ আগস্ট ২০১৮/নঈমুদ্দীন/সাইফ