জাতীয়

লঞ্চে ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বুধবার ঈদ। মঙ্গলবার শেষ কর্মদিবস শেষ হওয়ার আগেই যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন নাড়ির টানে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রধান পরিবহনের নাম লঞ্চ। এসব লঞ্চই এখন বাড়ির পানে ছুটে চলা মানুষদের শেষ সময়ের শেষ ভরসা। অবস্থা এমন- প্রায় সব লঞ্চেই এখন ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। বাড়তি যাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠবেন না- মাইকে অনবরত প্রচারিত এসব পারামর্শের মূল্য এখন তাদের কাছে নেই। লঞ্চের কেবিন, ডেক, ছাদ কিংবা করিডোর; সবখানেই যাত্রীদের ভিড়। ক্লান্তিতে অনেক শিশু-বৃদ্ধ লঞ্চের ভেতরে, অনেকে আবার লঞ্চের অপক্ষোয় বাইরে টার্মিনালে ঘুমিয়ে পড়েছেন। পন্টুনে ঢুকেও অপেক্ষায় অনেকে। তারপরও ঈদের আগেই গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর প্রত্যাশা তাদের। মঙ্গলবার সকাল থেকে সদরঘাটে যাত্রী চাপ লেগেই আছে। ভোর থেকেই ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। পাশাপাশি একই গন্তব্যের জন্য একাধিক লঞ্চ নোঙর করা রয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ আরো বাড়ছে। দুপুরের পর তা জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়া বরিশাল, হুলারহাট, পিরোজপুর, ভাণ্ডারিয়া, শরীয়তপুর, বরগুনা, ভোলা, চরফ্যাশন, দুমকি, আমতলীসহ বেশ কয়েকটি রুটের লঞ্চে ছিল যাত্রী বোঝাই। যাত্রীদের চাপে নির্ধারিত সময়ের আগে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। এছাড়া, বরিশালগামী প্রত্যেকটি লঞ্চেও দেখা গেছে একই চিত্র। আবহাওয়া কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন থাকায় বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, জানিয়ে ঢাকা নদীবন্দর নৌযান পরিদর্শক দীনেশ কুমার সাহা জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হলে দ্রুত যাতে নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত ওঠানো যায়, সে প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া, যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনোভাবেই যাতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে না পারে সে বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। ঢাকার একটি প্রিন্টার্স কোম্পানিতে কাজ করেন ভোলার আবু রহমত উল্লাহ। তিনি জানান, সকাল সকাল বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে ভেবেছিলেন। সে অনুযায়ী ব্যাগপত্র গুছিয়েই অফিসে এসেছিলেন। উদ্দেশ্য, দ্রুত কাজ শেষ করে রওনা হওয়া। কিন্তু অফিস থেকে বের হতে একটু দেরি হয়ে যাওয়ায় দুপুরে তিনি রওনা দিয়েছেন। ঠিকঠাক মতো লঞ্চে উঠে বসতে পেরে বেশ তৃপ্তি বোধ করছেন তিনি। এখন নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই খুশি। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, যেকোনো সময়ে আসতে পারে বৃষ্টি। তবু পরিবার নিয়ে লঞ্চের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন শ্রমজীবী মাহমুদুর রহমান। তিনি জানান, কোনো উপায় না থাকায় এখানে আসতে হয়েছে। যে করেই হোক বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করতে হবে। এজন্য একটু কষ্ট হবে, তা মেনে নিয়েই রওনা হয়েছেন তিনি। তার পাশে থাকা বরগুনার হেমায়েত কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, দুটি ঈদেই মূলত বাড়ি যাওয়া হয়। বাড়ি যাওয়ার পর যে তৃপ্তি সেটি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জানি, একটু কষ্ট হবে। কিন্তু সেটি কোনো বিষয় নয়। এদিকে, দূরপাল্লার অনেক লঞ্চে শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ টার্মিনালে না আসায় অনেক ভিড় হচ্ছে। সেজন‌্য একটি লঞ্চ আসলেই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ঝুঁকি থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করেই লঞ্চের ডেক ও ছাদে যাত্রী পরিপূর্ণ করতে দেখা গেছে। শেষ দিনে সদরঘাটের জনস্রোত নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন পুলিশ আর নিরাপত্তার দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা। সকালে ঢাকা-চরফ্যাশন রুটে চলাচলকারী এমভি তাসরিফ-৪ ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। অবস্থা এতটা বেগতিক হয়ে যায় যে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেউই যাত্রীদের রুখতে পারেননি। পরে মোটামুটি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই রওনা হয় লঞ্চটি। এদিকে, শেষ মুহূর্তে যাত্রীচাপ বেশি থাকায় ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। ঢাকা নদীবন্দরে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জয়নুল আবেদিন বলেন, এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), কোস্টগার্ড, র‌্যাব, আনসার, বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ডুবুরি দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এবং নৌ-নিরাপত্তার ক্যাডেট দল কাজ করছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৮/রেজা/রফিক