জাতীয়

কোরবানির চামড়ার সংকট কাটেনি এখনো

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : চলতি বছর কোরবানির আগে থেকেই চামড়ার দাম, সংকট সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা ছিল। যার ফলও দেখা গেছে ঈদের সময়। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, কোরবানির চামড়া নিয়ে তৈরি সংকট সাময়িকই হয়, এটি কেটে যাবে। তবে মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, ঈদুল আজহার চামড়া নিয়ে তৈরি সংকট সম্পূর্ণ কেটে যাবে। তবে ফড়িয়া ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) বলছে, সংকট কাটতে সময় লাগবে। বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, দেশের বাজারে চামড়া নিয়ে সৃষ্ট সংকট দীর্ঘস্থায়ী। এটি একবারে ঠিক করা সম্ভব নয়। প্রতি বছর কোরবানির চামড়া নিয়ে কোনো না কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এবারে কোরবানির চামড়া নিয়ে যে সংকট হয়েছে, তাতে আমাদের হাত নেই। তিনি আরো বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ফরিয়াদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামের থেকে কম দামে চামড়া কেনার ফলে ফরিয়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। কিন্তু আমাদের কাছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দামেই চামড়া বিক্রি করেছে বা করছে। তারা ফরিয়াদের কাছে থেকে প্রতি পিস চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। এর ফলে বেশি দামে চামড়া কিনতে গিয়ে আমাদেরও সমস্যা পোহাতে  হতে হয়েছে। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পে ক্রান্তিকাল চলছে। এবার ৪০ শতাংশ ট্যানারিকে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হয়েছে। সাভারে অনেক ট্যানারিতো এখনও নানা সমস্যার কারণে উৎপাদনেই যেতে পারেনি। এই দায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক)। ভুল তথ্য দিয়ে ট্যানারি মালিকদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখানে যে বিনিয়োগ করেছিল ট্যানারি মালিকরা তা মাঠে মারা গেছে। বার বার সময় বাড়িয়েও এ পরিকল্পিত শিল্প নগরীর কাজ শেষ না হওয়ার দায় বিসিকের। সবকিছু মিলিয়ে চামড়া শিল্পে সংকট দীর্ঘস্থায়ী। আর শিল্পের এমন দশার নেপথ্যে রয়েছে সরকারি সহায়তা না থাকা ও পুঁজি সংকট। শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া শিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প। তাই এটিকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে সরকারকে আরো আন্তরিক হবার অনুরোধ জানাচ্ছি। তবে আমি এটিও বলতে চাই না যে সরকার আন্তরিক না। এর পরিমাণ আরো বাড়ানো দরকার। এদিকে চামড়ার দাম এখনও কম হবার কারণে ফরিয়া ব্যবসায়ী পারভেজ অভিযোগ করে বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখনও দাম কম বলার কারণে চামড়া লবণ দিয়ে রেখে দিয়েছি। মার্কেট ভাল হলে ছেড়ে দিব। তবে মার্কেট ঠিক হবে কি না-এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে চামড়া নিয়ে তৈরি সংকট আর থাকবে না বলে জানিয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সারা দেশ থেকে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চামড়া আমরা কিনতে সক্ষম হব। মৌসুমি ব্যবসায়ী বা ফরিয়াদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত যে চামড়া আমরা সংগ্রহ করেছি-তা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬০ শতাংশ হবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে দাম নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছিল তা থাকবে না। তবে ট্যানারি মালিকদের কাছে গত বছর যে চামড়া বিক্রি হয়েছিল, তার দাম এখনও পাওয়া যায়নি। সেখানে অনেক ব্যবসায়ীর টাকা এখন পর্যন্ত আটকে আছে বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত, এবার সারা দেশ থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ কোটি ২৫ থেকে ৩০ লাখ এবং ঢাকার ভেতরে চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ সেপ্টেম্বর ২০১৮/নাসির/হাসান/সাইফ