জাতীয়

‘ব্যক্তিগত স্বার্থে অনেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করছেন’

রাইজিংবিডি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাংবাদিকদের একটি অংশ এবং সুশীল সমাজের কেউ কেউ দেশ ও সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের কথা বিবেচনা না করেই ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠী স্বার্থে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার দশম  জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ ব্যক্তিস্বার্থ থেকে মতামত দিয়ে এ আইনের বিরোধিতা করছেন। কিন্তু সমগ্র দেশ ও সমাজের স্বার্থে এটি যে গুরুত্বপূর্ণ তা তারা ভাবেননি।’ তিনি বলেন, ‘কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক, সম্পাদক ডিজিটাল আইনের বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ হয়ে যাবে। কিন্তু কণ্ঠ তো রোধ হয়নি। রোধ হলে তো মতামত দিতে পারতেন না।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুশ্চিন্তার কিছু নেই উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, দেশের স্বার্থেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। এই বিল নিয়ে সাংবাদিকদের এতো উদ্বেগ কেন প্রশ্ন তোলেন সংসদ নেতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ, জাতি ও শিশুদের কল্যাণে আমরা এ আইন প্রণয়ন করেছি। মানুষকে অবশ্যই নিরাপত্তা দিতে হবে। সমাজকে রক্ষা করতে হবে। সংসারকে বাঁচাতে হবে। প্রতিটি মানুষের চরিত্র রক্ষা করতে হবে। সেদিক বিবেচনা করেই আমরা এই ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস করেছি।’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচকদের উদ্দেশে সংসদ নেতা বলেন, ‘এই আইন নিয়ে যারা অনেক সমালোচনা করছেন, তাদের বলব এই দেশেতো বহু ঘটনা ঘটে গেছে। অতীতের বিষয়গুলো আপনারা একটু চিন্তা করে দেখুন। তখন কেমন ছিল, এখন কেমন আছে? এখনতো সবই উন্মুক্ত। যে যার মতো লিখে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে এত উন্নয়ন, বিশ্ববাসীর চোখেও যা আজ দৃশ্যমান। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সমাদৃত হচ্ছে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ সময় কিছু পত্রিকার অহেতুক সরকারের সমালোচনার মনোভাব পরিহার করার এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গঠনমূলক সমালোচনা হোক, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু, এমনভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা হয় যে, এই সরকার খুবই খারাপ কাজ করছে। কী খারাপ কাজটা করলাম, সেটাই আমার প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘যারা কোনো কিছু ভালো দেখতে পায় না। তারাই সব খারাপ দেখবে। এটা তাদের চরিত্র। আমি সেভাবেই নিয়ে থাকি।’ সংসদ নেতা বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষের চরিত্রই আছে তাদের কিছুই ভালো লাগে না। এটা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতাও। এই অসুস্থতায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য আমার বলার কিছু নেই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশকে ভালোবাসি, দেশকে জানি-চিনি। এই দেশ আমার, এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই তিনি সারাজীবন জেল খেটে গেছেন। সারাজীবন কষ্ট শিকার করেছেন। দেশের উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পারেননি। তাকে হত্যা করা হয়েছে।’ তার সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সুযোগ সন্ধানী তথাকথিত সুশীলদের এ সময় কঠোর সমালোচনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের সব প্রত্যাশাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষ আবার সুশাসন পেতে শুরু করলো’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে জঙ্গি-সন্ত্রাস বড় সমস্যা। তারপরও আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এ সমস্যা মোকাবিলা করেছি। মাদকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছি এবং নিচ্ছি। ফলে অনেক পরিবার ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। দেশের উত্তর জনপদে এখন আর কঙ্কালসার মানুষের দেখা মেলে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে খাদ্যের নিশ্চয়তার পাশাপাশি চিকিৎসা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। গড় আয়ু এখন ৬৪ বছর থেকে ৭১ বছর বয়সে পৌঁছেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নের উদাহরণ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, মাত্র তিন হাজার মেগাওয়াট থেকে আজকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এই খাতের বিপুল উন্নয়ন করেছি। সব শিল্প-কারখানা যাতে চালু থাকতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। সড়ক, নৌ ও বিমান সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হয়েছে। ‘বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি দেশ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন এবং জলায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা ভোগ বিলাসের জন্য নয়। এটা নীতির প্রশ্ন, আমাদের নীতি হচ্ছে জনগণের জন্য রাজনীতি করা এবং তৃণমূল থেকে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। তাই আজ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চলতি অধিবেশনের মাত্র ১০দিনে ১৮টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হওয়ায় এবং বিলের ওপর সকল আলোচনায় অংশগ্রহণ সহ মতামত প্রক্রিয়ায় সক্রিয় থাকায় বিরোধীদল সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দশম জাতীয় সংসদের প্রশংসা করে বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদে অশালীন কথা নাই, আজে-বাজে মন্তব্য নেই। সুন্দর একটি পরিবেশ ছিল। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের এখন সংসদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছ সরকার ও বিরোধীদলের পারস্পরিক সহযোগিতার কারণে। এই অধিবেশনে যে বিলগুলো পাস হয়েছে সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তথ্যসূত্র : বাসস রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮/সাইফ