জাতীয়

বাংলাদেশে ব্যবহৃত পানির ৯২ শতাংশই দূষিত: বিশ্বব্যাংক

সচিবালয় প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ব্যবহার করা প্রায় ৯২ শতাংশ পানিই দূষিত। পান করার ৪১ শতাংশ পানিতেই রয়েছে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া। আর ১৩ শতাংশ পানি আর্সেনিকযুক্ত। পানির উৎস ও ব্যবহার সংক্রান্ত এক গবেষণাপত্রে এ তথ্য জানিয়েছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানী ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর শিরিন ঝুমা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুখসানা কাদের এ সময় উপস্থিত ছিলেন । সংস্থাটি বলছে, বিশুদ্ধ পানির আরেক নাম যেমন জীবন তেমনি মানুষের মৃত্যুও সবচেয়ে বেশি হয় দূষিত পানির কারণে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাব অতি দ্রুত দারিদ্র্য বাড়ানোরও একটি কারণ। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট চলছে। নলকূপ বা উপরিভাগ পানির সব কয়টি উৎসই এখন ঝুঁকিতে। বাংলাদেশে পান করার ৪১ শতাংশ পানিতেই ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আছে। আর ১৩ শতাংশ পানি আর্সেনিকযুক্ত। শহরগুলোতে ৫২ শতাংশ পানি পাইপলাইনে সরবরাহ করা হলেও তা সঠিক মাত্রায় শোধন করা হয় না। বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরও গতিশীল হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পানিতে ই. কোলাই ব্যাক্টেরিয়া থাকায় এবং স্যানিটেশন সমস্যার কারণে এক-পঞ্চমাংশ দরিদ্র মানুষ পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দরিদ্র্, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত অর্থাৎ শহর ও গ্রামের প্রায় সবাই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে শহরে বস্তিতে বাস করা লোকজনের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এখন ৯৮ শতাংশ মানুষের কাছে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এর চেয়ে প্রধান সমস্যা হল সবার কাছে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানানো হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের পাঁচ কোটি মানুষ টয়লেট শেয়ার করেন। অর্থাৎ একাধিক পরিবারের লোকজন একটি টয়লেট ব্যবহার করেন। এ সংখ্যা গ্রামে যেমন রয়েছে, তেমনি শহরেও রয়েছে। তবে শহরে বস্তি এলাকায় টয়লেট শেয়ারের সংখ্যা গ্রাম এলাকার লোকজনের তুলনায় তিনগুণ বেশি। ফলে এসব লোকজন নানা প্রকার রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশে ভুগর্ভস্থ পানির ১৩ শতাংশে আর্সেনিক রয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে  এই হার বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পানিতে আর্সেনিকের পরিমান বাড়ছে। ‘বাংলাদেশে দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি জরুরি নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে।’ বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর শিরিন ঝুমা বলেন, ‘স্যানিটেশন ও পানিজনিত সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অনেক শিশু যথাযথভাবে বিকশিত হচ্ছে না। পাঁচ বছর বয়সের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

ঝুমার ভাষ্য, বাংলাদেশকে পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক সব ধরনের সহায়তা করবে। এর আগে গতমাসে বাংলাদেশের নগর এলাকায় পরিচ্ছন্নতা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা: দেশের পরিবেশগত বিশ্লেষণ ২০১৮’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছিল- বাংলাদেশে নগর এলাকায় পরিবেশের অবনতি ও দূষণের ফলে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ছয় শ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। যা দেশের জিডিপির (২০১৫) প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। পরিবেশ ও দূষণের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এখানে দূষণ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে গেছে (২০১৫)। নগর এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই পরিবেশগত কারণে। সারা বিশ্বে গড়ে ১৬ শতাংশ মানুষের মৃত্যু পরিবেশগত বিভিন্ন দূষণের কারণে হলেও বাংলাদেশে এর মাত্রা ২৮ শতাংশ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ অক্টোবর ২০১৮/হাসান/শাহনেওয়াজ