জাতীয়

সড়কে থামছে না প্রাণহানি

মাকসুদুর রহমান : রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের পরও ঢাকার সড়কে প্রাণহানি থেমে নেই। সোমবারও রাজধানীতে বেপরোয়া যানে তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সড়ক স্বল্পতার কারণেই দুর্ঘটনা কমছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রাজধানীর বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহিন আলম জানান, সোমবার ভোরে আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত (২৭) যুবকের মৃত্যু হয়। তার পরনে জিন্স প্যান্ট ও চেক শার্ট ছিল। তবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত তার নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। এর আগে রোববার রাতে মোটরসাইকেলে সাভার থেকে মিরপুরের দিকে যাচ্ছিলেন রাজ্জাক (৪৬) ও তার বন্ধু জাহিদুর রহমান দুদু (৪২) নামে দুই ব্যবসায়ী। এ সময় অজ্ঞাত এক গাড়ির ধাক্কায় তারা আহত হন। রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজিজুল হক জানান, তাদের দ্রুত উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে দুটি ঘটনায় কোনো গাড়ি বা চালককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও সড়কের প্রাণহানির শিকার হচ্ছেন বলে আমাদের ঢামেক প্রতিনিধি জানান। তবে এ তথ্য মানতে নারাজ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সড়কে মনিটরিং বেড়েছে। এ কারণে দুর্ঘটনাও কমে এসেছে। আবার সড়কে কোনো শৃঙ্খলাও ছিল না। চালকদের চুক্তিভিত্তিক নয়, মজুরি ভিত্তিতে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোনো চালক গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে পারছেন না।’ ট্রাফিক পুলিশের তথ্য অনুয়ায়ী রাজধানীতে ৫৪টি ঝুঁকিপূর্ণ মোড় আছে, যেগুলোতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, কাকলী, জোয়ার সাহারা, উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়ক মোড়, কাকলী, ধানমন্ডি, টেকনিক্যাল মোড় ও  মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক। চালকের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো আর পথচারীদের অসচেতনতা এবং ফুটপাত না থাকার কারণে হাঁটতে গিয়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে ২১ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এ সংখ্যা ১২ হাজার। বুয়েটের হিসাবে এ সংখ্যা ১১ থেকে ১২ হাজারের মধ্যে। আর যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবে এ সংখ্যা সাড়ে আট হাজার। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সড়কের নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কুফল হলো সড়ক দুর্ঘটনা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আরো আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশাসন যদি আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে, তবে সড়কে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলবে এবং দুর্ঘটনাও অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ অক্টোবর ২০১৮/মাকসুদ/সাইফ