জাতীয়

‘দণ্ডপ্রাপ্তদের সাথে ঐক্যে উন্নয়ন অসম্ভব’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ফাঁসির আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের সাথে যারা ঐক্য করে, তারা যাই করুক, দেশের উন্নয়ন করতে পারে না। মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্র আগেও ছিল, এখনো আছে। কিছু দলছুট ব্যক্তি ঐক্য করেছে। পদত্যাগ করতে হবে, পার্লামেন্ট ভাঙতে হবে- এসব দাবি তুলেছে। এটা সম্ভব নয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সাত দল, ১১ দল, ১৫ দল যাই হোক না কেন, যে যাই বলুক না কেন, সংবিধানের বাইরে কিছুই হবে না। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অনেক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা তিনটি সূচকে তাদের থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। তিনি বলেন, মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং আলুতে আমরা উদ্বৃত্ত রয়েছি। কৃষির প্রতি সেক্টরে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের ক্রমাগত সমর্থনে কৃষির সকল ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে এ প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যণীয়। ১৯৭২ সালে এ দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ১ কোটি টন। বর্তমান তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি টনেরও ওপরে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় নেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহীন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক। সেমিনারের আগে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বরে তিন দিনের খাদ্য মেলা উদ্বোধন করেন। সকালে বিশ্ব খাদ্য দিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালি জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে শুরু হয়ে মেলা চত্বরে শেষ হয়। এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কর্ম গড়ে ভবিষ্যৎ, কর্মই গড়বে ২০৩০-এ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব’। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৮ উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার, মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার প্রকাশনা ও বিতরণ, মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। খাদ্য মেলায় সরকারি ও বেসরকারি ৪০টি প্রতিষ্ঠানের মোট স্টলের সংখ্যা ৬৩টি। মেলা প্রতিদিন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য দিবসের উদ্দেশ্য হলো- ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা, কৃষির উন্নতিতে মনোযোগ দেওয়া, কৃষিভিত্তিক উৎপাদনে উৎসাহ দান করা, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান, গ্রামীণ মানুষদের (মূলত মহিলা ও কম উন্নত মানুষ) অবদানে উৎসাহ দান, প্রযুক্তির সমৃদ্ধিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া । উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এফএও ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ১৯৭৯ সালে এ সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী  বিজ্ঞানী ড. পল রোমানি বিশ্বব্যাপী খাদ্য দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবের পর ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ অক্টোবর ২০১৮/সাওন/রফিক