জাতীয়

নির্বাচনে পরাজয় বুঝতে পেরেছে বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী

রাইজিংবিডি ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাদের পরাজয় বুঝতে পেরেছে এবং নির্বাচনের আগে তারা নাশকতা করতে পারে। তিনি দলের নেতাকর্মীদেরকে বিএনপি ও এর সহযোগীদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই নাশকতা করতে পারে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ব্যক্তিগত বাসভবন সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচ জেলায় নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণদানকালে এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ইতোমধ্যেই আসন্ন নির্বাচনে তাদের পরাজয় বুঝতে পেরেছে। ফলে, তারা যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে অথবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাতে পারে।’ তিনি বলেন, বিএনপি ইতিমধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা, ১৪১ জনকে আহত করেছে, আওয়ামী লীগের ১৭০টি নির্বাচনী কার্যালয় ও বসতবাড়িতে হামলা এবং ৫৪টি জায়গায় বোমা হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদেরকে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বরং তাদের (বিএনপি) নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করুন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করুক। এটা তাদের অধিকার এবং জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিবেন। তাই আমরা চাই, সকল রাজনৈতিক দল অবাধে ও সাবলীলভাবে তাদের নির্বাচনী প্রচার করুক।’ শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকেলে সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লা, যশোর, টাঙ্গাইল, পাবনা ও পঞ্চগড়ে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের জনগণ তার দলের (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) পক্ষে রায় দিবে বলে দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিজয় নিশ্চিত করতে জনগণ ‘নৌকা’প্রতীকে ভোট দিবেন। শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট চাওয়ার আগে বিএনপিকে তার চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে। তাদেরকে (বিএনপি) জনগণের ক্ষতি, হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের সমর্থন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট জেলার জনগণের কাছে প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাদেরকে বিজয়ী করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার আগে গত ১০ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিসমূহ দর্শকদের সামনে বড় পর্দায় উপস্থাপন করা হয়। কুমিল্লায় নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, তার দল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ নৌকার পক্ষে আরেকটি বিজয় আনবে। যা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে শক্তিশালী করবে এবং এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। শেখ হাসিনা বলেন, তার দল সব সময় আন্তরিকতার সাথে নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে কুমিল্লার ১৩টি উপজেলার সবগুলোতে বিদ্যুত দেওয়া হয়েছে। একটি সরকারের ধারাবাহিকতা উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে এবং জনগণ এর সুফল ভোগ করতে পারে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের সকল প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রার্থীরা হলেন: সুবিদ আলী ভূঁইয়া (কুমিল্লা-১), সেলিম আহমেদ (কুমিল্লা-২), ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (কুমিল্লা-৩), রাজীব মো. ফখরুল (কুমিল্লা-৪), আবদুল মতিন খসরু (কুমিল্লা-৫), আ ক ম বাহাউদ্দিন (কুমিল্লা-৬), অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (কুমিল্লা-৭), নাসিমুল আলম চৌধুরী (কুমিল্লা-৮), মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯), আ হ ম মুস্তফা কামাল (কুমিল্লা-১০) ও মো. মুজিবুল হক (কুমিল্লা-১১)। শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হলে বাংলাদেশ বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে এবং ২০১৪-১৫ সালের মতো একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে দেশকে ঠেলে দিতে মাঠে নেমেছে। যশোরের সমাবেশে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার পুনঃনির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের হার আরো ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। আর বাংলাদেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, যশোরে হাইটেক পার্ক, স্থলবন্দর এবং পদ্মা সেতু থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বিএনপির নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তারা ওদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে ও তাতে লুটপাট চালিয়েছে এবং সম্পদ বিনষ্ট করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে, উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা আবারো ওইসব দিনে ফিরে যেতে চাই না। সমাবেশে তিনি যশোরের ৬ জন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন। তারা হলেন: শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১), মো. নাসির উদ্দিন (যশোর-২), কাজী নাবিল আহমেদ (যশোর-৩), রঞ্জিত কুমার রায় (যশোর-৪), স্বপন ভট্টাচার্য (যশোর-৫) ও ইসমত আরা সাদেক (যশোর-৬)। প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং পুনরায় জনগণের সেবার সুযোগ দিতে আওয়ামী লীগকে পুনঃনির্বাচিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দেশে ইতোমধ্যে বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি এবং অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই তার দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, যুবকরাই দেশের শক্তি এবং তারাই বাংলাদেশে সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। এ কারণে এই বছরের নির্বাচনী ইশতেহারে যুব সম্প্রদায়ের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জাতি ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। যখন এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ও কাঙ্ক্ষিত অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে, সে সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন হিসাবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দুটি অনুষ্ঠান উদযাপন করতে চাই। তিনি টাঙ্গাইল, পাবনা ও পঞ্চগড়ে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে দলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী পরে তার নিজ নিবাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া আসনের জনগণের উদ্দেশে ফোনে বক্তব্য রাখেন। তথ্যসূত্র : বাসস রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৮/রফিক