জাতীয়

৪ কোটি শিশুর সুরক্ষায় সহায়তার আবেদন ইউনিসেফের

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবিক সংকটে থাকা শিশুদের জন্য নিজেদের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে ৩৯০ কোটি ডলার অর্থসহায়তার আবেদন জানিয়েছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি মঙ্গলবার সতর্ক করেছে যে, লাখ লাখ শিশু গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা সেবা ছাড়াই সংঘাত ও দুর্যোগ আক্রান্ত দেশে বসবাস করছে, যা তাদের নিরাপত্তা, কল্যাণ ও ভবিষ্যতকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ইউনিসেফের ‘হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন ফর চিলড্রেনস’-এ সংস্থাটির ২০১৯ সালের আর্জি এবং বিশ্বব্যাপী ৫৯টি দেশে ৪ কোটি ১০ লাখ শিশুকে নিরাপদ পানি, পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ প্রদানে প্রচেষ্টার বিষয়টি উঠে এসেছে। ইউনিসেফের পক্ষ থেকে সিরিয়া সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সুরক্ষা সেবা প্রদানের জন্য প্রায় ১২ কোটি ১০ লাখ ডলারসহ শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য ৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েত্তা ফোর বলেন, ‘আজকে সংঘাত বা দুর্যোগের মধ্যে বসবাসকারী লাখ লাখ শিশু ভয়াবহ মাত্রার সহিংসতা, দুর্দশা ও আতঙ্কের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমের প্রভাব বাড়াবাড়ি হতে পারে না। যখন শিশুদের নিরাপদ খেলার জায়গা থাকবে না, যখন তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে পারবে না, যখন তারা মানসিক সহায়তা পাবে না, তখন তারা যুদ্ধের অদৃশ্য ক্ষত থেকে সেরে উঠবে না।’ ইউনিসেফের হিসাব অুনযায়ী, ৩ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি শিশু সুরক্ষা সেবা ছাড়াই সংঘাত ও দুর্যোগ আক্রান্ত পরিবেশে বসবাস করছে, যাদের মধ্যে ইয়েমেনে ৬৬ লাখ, সিরিয়ায় ৫৫ লাখ ও ডমিনিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআরসি) ৪০ লাখ শিশু রয়েছে। ইউনিসেফের ভাষ্য- শোষণ, অবহেলা, নির্যাতন, আতঙ্ক ও সহিংসতা প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহণসহ সব প্রচেষ্টাই শিশু সুরক্ষা সেবার অন্তর্ভুক্ত। শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য সম্ভাব্য বিপদসমূহ চিহ্নিত করা এবং তা কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইউনিসেফ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা এবং কার্যক্রমের অন্য ক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে পরিচালিত মানবিক প্রকল্পগুলোর কেন্দ্রে যাতে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি থাকে তা নিশ্চিত করতেও কাজ করে। তবে তহবিল সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি বিবাদমান পক্ষগুলোর ক্রমবর্ধমান অবজ্ঞা এবং মানবিক সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগ অস্বীকারের অর্থ হচ্ছে, শিশুদের সুরক্ষায় সাহায্য সংস্থাগুলোর সক্ষমতা ভয়াবহ রকমের সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, ডিআরসিতে ২০১৮ সালে শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের মাত্র এক তৃতীয়াংশই ইউনিসেফ পায়। সিরিয়ার শিশুদের সুরক্ষার জন্য মেলেনি প্রয়োজনীয় তহবিলের এক-পঞ্চমাংশ। ইউনিসেফের জরুরি প্রকল্পবিষয়ক পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেন, ‘এই শিশুদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ও টেকসই আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ড ছাড়া অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জরুরি অবস্থায় শিশুদের সুরক্ষায় সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত।’ মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ৪ লাখ শিশুসহ ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী অন্তঃপ্রবাহের এই বিপুল ব্যাপ্তি ও দ্রুত গতি থাকা সত্বেও ইউনিসেফ ১২ লাখেরও বেশি শরণার্থী ও আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে জীবন রক্ষাকারী সেবা প্রদান করে। এর আওতায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সুপেয় পানির সুবিধা পায়, ৫ বছরের কম বয়সী ২০ হাজার শিশু যারা চরম অপুষ্টির শিকার তারা চিকিৎসা পায় এবং ১২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি জনসংখ্যা যাদের বয়স ১ বছরের বেশী তারা কলেরার টীকা পায়। এসব কিছুর জন্য দাতা সংস্থাগুলোর উদার সহায়তাকে ধন্যবাদ।  ২০১৯ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষাকারী ও মানবিক উন্নয়ন চাহিদা মেটাতে দাতাদের কাছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার চেয়েছে ইউনিসেফ। এসব চাহিদার মধ্যে রয়েছে অপরিহার্য পুষ্টি, স্বাস্থ্য, ওয়াশ, সুরক্ষা ও শিক্ষাপ্রাপ্তির সুযোগ। দেশটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির উচ্চ মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের আকস্মিক দুর্যোগ/মহামারীর জন্য পূর্বপ্রস্তুতি এবং তা মোকাবিলায় দেশজুড়ে মানবিক ব্যবস্থার সক্ষমতায় সহায়তা দেওয়া হবে। ২০১৯ সালে শিশু অধিকারবিষয়ক কনভেনশনের ৩০ বছরপূর্তি এবং জেনেভা কনভেনশনের ৭০ বছরপূর্তি হবে। তারপরও গত তিন দশকের মধ্যে আজ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক দেশ অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিকভাবে বিবাদে লিপ্ত, যা লাখ লাখ শিশুর নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্বজুড়ে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বসবাসরত শিশুদের সুরক্ষা প্রদানে বিশ্ব ব্যর্থ হচ্ছে, যা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনছে- এক মাস আগে ইউনিসেফ এ কথা বলার পর শিশুদের সংস্থাটি বিশ্বের কাছে এই অর্থ সহায়তা চাইল। যেসব শিশু অব্যাহতভাবে সহিসংতা বা সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বসবাস করছে, বিশেষ করে খুব ছোট বয়সে, তারা সবচেয়ে ভয়াবহ চাপের মধ্যে বসবাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি এমন এক অবস্থা, যা সঠিক সহায়তা ব্যতীত তাদের জ্ঞানের প্রসার এবং সামাজিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে জীবনব্যাপী নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। যুদ্ধ, স্থানচ্যুতি এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ অন্যান্য আতঙ্কজনক ঘটনায় বিপর্যস্ত কিছু শিশুকে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং তাদের মানসিক অবস্থার উত্তরণে সহায়তা করতে বিশেষায়িত সেবা প্রয়োজন। পৃথক পাঁচটি বৃহত্তম আবেদন হচ্ছে- মিসর, জর্ডান, লেবানন, ইরাক ও তুরস্কে সিরিয়ার শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ৯০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার; ইয়েমেনের জন্য ৫৪ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলার; ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর জন্য ৩২ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার; সিরিয়ার জন্য ৩১ কোটি ৯৮ লাখ মার্কিন ডলার এবং দক্ষিণ সুদানের জন্য ১৭ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জানুয়ারি ২০১৯/সাওন/রফিক