জাতীয়

‘আপনারা আইনের পরিপালক, কালো আইনের নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ অফিসারদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা আইনের পরিপালক, কালো আইনের নয়। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আপনারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করবেন। বলা হয়ে থাকে, নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। কথাটা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। আইন যদি সবার জন্য সমান না হয়, আইন যদি সবার প্রতি সম অধিকারের আচরণ ও সম নিশ্চয়তা না দেয় তাহলে সে আইন আইন নয়, কালো আইন। আপনারা আইনের পরিপালক, কালো আইনের নয়। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।         মাহবুব তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি হলো নির্বাচন। সরকার ও স্থানীয় সরকার পরিচালনার স্তরে স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে যারা দেশ পরিচালনা করবেন, নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আপনারা বিশেষ দায়িত্ব পালন করছেন। এ দায়িত্বটি অত্যন্ত গৌরবজনক। ইসি মাহবুব বলেন, নির্বাচনে আচরণবিধি দৃঢ়ভাবে কার্যকর করা, আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের শাস্তি দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা, এমনকি অভিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ আপনাদের দায়িত্ব। এ কাজে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন আপনাদের সাফল্যের চাবিকাঠি। আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অধিক বলার অবকাশ নেই। বিচারকের সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে আপনারা কর্তব্য পালন করবেন। তিনি আরো বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান বিরোধীদলের প্রার্থী না থাকায় আমি এই নির্বাচনকে উত্তাপ ও উষ্ণতাবিহীন একটি শীতল নির্বাচন বলে অভিহিত করেছিলাম। কিন্তু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে এই নির্বাচনকে আর নিরুত্তাপ বলার কোনো অবকাশ নেই। ঢাকা শহরের মেয়রদেরকে নগরপিতা বলা হয়। বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদেরকে অনুরূপভাবে নগরভ্রাতা বলা যেতে পারে। ভাইয়ের মতই সুখে-দুঃখে তারা নাগরিকদের পাশে থাকবেন এই তো সবার প্রত্যাশা। পরিবারের ভাইদের বাছাই করে দেওয়া যায় না। কিন্তু নির্বাচিত ভাইদের ভালো-মন্দ বাছাই করার সুযোগ থাকে। এ অবস্থায় সৎ, সংবেদনশীল, মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন, নৈতিক মূল্যবোধে দৃঢ় উন্নত চরিত্রের কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড প্রধান হিসেবে সবাই দেখতে চায়। মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নির্বাচনে সর্বপ্রকার চাপ, লোভ বা প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অনিয়মের আচ্ছাদনে অযোগ্য প্রার্থীরা যেন নির্বাচনে জয়ী না হন। মাহবুব তালুকদার বলেন, ঢাকা মহানগরীর দুই সিটি করপোরেশন নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। জনসংখ্যার আধিক্য, যানজট ও যাতায়াতের অব্যবস্থাপনা, বাসস্থানের অপ্রতুলতা, রাস্তাঘাট, অপরিকল্পিত পয়ঃপ্রণালী, খেলার মাঠের অভাব ইত্যাদি শত সমস্যায় নগর জীবনের শৃঙ্খলা আক্রান্ত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ চাইলে মেয়রসহ সকল কাউন্সিলরদের জনকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ প্রার্থী জয়ী হওয়ার পথ সুগম রাখতে হবে। নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করে কেউ অবৈধ উপায়ে আসন দখল না করতে পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনের ওপর রাজধানীবাসীর সুখ ও শান্তি সর্বোতভাবে নির্ভরশীল। মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনের আচরণবিধি এবং নির্বাচনী বিধি-বিধান সম্পর্কে আপনাদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তা দায়িত্ব পালনের ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আপনাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেবে। আত্মবিশ্বাস না থাকলে কোনো কর্তব্যপালনই সুসম্পন্ন হতে পারে না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের যে যোগ্যতা ও দক্ষতা শাণিত হয় তা কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তিনি বলেন, একটা কথা আমি গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের দেশপ্রেমের অভিব্যক্তি। প্রতিটি নির্বাচনকে আইনানুগ সুষ্ঠু ও শুদ্ধভাবে সম্পন্ন করে দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ সমুন্নত রাখতে চাই। তাই কোনো নির্বাচনেই শীথিলতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার উদ্ধৃত করে মাহবুব বলেন, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ আপনাদের বিচারিক সক্ষতার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’। এই হতাশাব্যঞ্জক উক্তি থেকে বেরিয়ে এসে দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমে সেই কান্না আপনারা মুছিয়ে দেবেন এটাই জনপ্রত্যাশা। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/হাসিবুল/সাইফ