জাতীয়

অগ্নিদগ্ধদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত রোগীদের খোঁজ-খবর নিতে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার রাতের ঘটনার পর দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সারা রাত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সারা রাত জেগে উদ্ধার কাজ তদারকি করেছেন। এ ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি। এদিকে, গতকাল শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে গঠিত বিভিন্ন সরকারি কমিটিও গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দগ্ধ ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক: বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্তলাল সেন জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের পর ঢামেকে ১৪ জন এসেছিল। যার মধ্যে ৯ জনকে আইসিইউতে ও পোস্ট অপারেটিভে রাখা হয়েছে। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ভর্তি থাকা ৯ জন অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ডা. সামন্তলাল সেন বলেছেন, তাদের অবস্থা আমরা ঝুঁকিমুক্ত বলবো না, যতক্ষণ তারা হাসপাতালে থাকে। এ ৯ জনের সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। কিন্তু আশঙ্কাজনক ৯ জনকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তাদের দেশেই উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, আইসিইউতে ভর্তি থাকা সোহাগের শরীরের ৬০ শতাংশ, রেজাউল করিমের ৫৭ শতাংশ, জাকির হোসেনের ৩৮ শতাংশ, মুজাফফর আহমদের ৩০ শতাংশ ও আনোয়ার হোসেনের ২৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। আর পোস্ট অপারেটিভে ভর্তি থাকা হেলালউদ্দিনের শরীরের ১৬ শতাংশ, সেলিমের ১৪ শতাংশ, মাহমুদের ১৩ শতাংশ ও সালাউদ্দিন ১০ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। ৪৫ লাশ হস্তান্তর: অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ৪৫ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া ৪৫ লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি লাশগুলো আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তাদের শনাক্তের জন্য স্বজনদের ডিএনএ টেস্ট করা হবে বলে জানা গেছে। যে ৪৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন-রাজু (৩০), তার ভাই মাসুদ রানা (৩৫), সিদ্দিকুল্লাহ (৪৫), আবু বকর সিদ্দিক (২৭), আলী মিয়া (৭৫), মোশাররফ হোসেন (৩৮), কামাল হোসেন (৫২), ইয়াসিন খান রনি (৩২), জুম্মন (৬৫), এনামুল হক (২৮), মজিবর হাওলাদার (৪৫), মুফতি ওমর ফারুক (৩৫), মোহাম্মদ আলী (৩২) ও তার ভাই আবু রায়হান (৩১), তার ছেলে আরাফাত (৩), ইমতিয়াজ ইমরোজ (২৪), হেলাল (৩০), ওয়াফিউল্লাহ (২৫), সোনিয়া (২৮), স্বামী মিঠু (৩৫), তাদের ছেলে শাহিদ (৩), রহিম দুলাল (৪৫), হিরা, নাসির, মঞ্জু, আনোয়ার, কাওসার, শায়লা খাতুন, আরমান হোসেন রিমন, মামুনুর রশীদ, আবু তাহের, রুবেল হোসেন, সৈয়দ সালাউদ্দিন, মুসা, ইলিয়াস মিয়া, মিজানুর, আসিফ, মো. হোসেন বাবু, খলিলুর রহমান সিরাজ, নূর ইসলাম হানিফ এবং নবীউল্লাহ খান। ঢাকাসহ আট জেলায় ৩৬ জনের দাফন: নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের দাফনের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে ১৫ জনের দাফনের খবর নিশ্চিত করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়। তিনি বলেন, আজিমপুর কবরস্থানে চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ১৫ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। জুরাইন বা ঢাকার অন্য কোনো কবরস্থানে লাশ দাফনের আর কোনো তথ্য আমার জানা নেই। এছাড়া ঢাকার বাইরে সাত জেলায় আরো ২১ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালীতে ১০ জন, ফেনীতে ৩ জন, চাঁদপুরে ২ জন, পটুয়াখালীতে ২ জন, কুমিল্লায় ২ জন এবং নাটোর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন করে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলা ভবনে প্রথমে আগুন লাগে, এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি, পেছনের একটি এবং সরু গলির বিপরীত পাশের দুটি ভবনে। আগুন লাগার পরপরই চার তলা ভবনটির সামনে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় রাস্তায় থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়। আগুনের সময় রাজমনি হোটেলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের পর ওই গ্যাস সিলিন্ডারেও আগুন লেগে ভবনে ও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ৬৭ জন মারা যান। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/হাসান/সাইফ