জাতীয়

আমি ঘুষ খাই না, খেতেও দেব না : গণপূর্তমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে ঘুষ খাই না, কমিশন খাই না, কমিশন বাণিজ্যও করি না। তাই আমার মন্ত্রণালয়ের কেউ ঘুষ খেতে পারবে না, খেতে দেব না।’’ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী। শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, ‘‘সৎভাবে কাজ করুন। এর বিকল্প নেই। কারো বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে, তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হয় দুর্নীতিবাজরা থাকবে, না হয় আমি থাকব। এ নিয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’’ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা তুলে ধরে তাদের সাবধান হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে একটা সুযোগ দেয়ার জন্য বলেছি। ভালো হতে হবে। ভালো যদি না হন, খুব শিগগিরই আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’  মন্ত্রী বলেন, ‘‘ঘুষ দুর্নীতির এই সিন্ডিকেট আমি ভাঙবই। এটা যদি আমি করতে না পারি, তাহলে আমি হারিয়ে যাব, অথবা যাদের দুর্নীতির কারণে মানুষ ভুগছে, তারাই এখান থেকে হারিয়ে যাবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘রাজউকে এক হাজারের বেশি ফাইল পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা কিন্তু ইতোমধ্যে ৭০০ ফাইল উদ্ধার করেছি। অনেক ডেস্কের তালা ভেঙে ফাইল বের করেছি। আর বাকিগুলোর জন্য এক মাস সময় দিয়ে এসেছি। ফাইল বের হতে হবে। হয় ফাইল বের হবে, না হয় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের হয়ে যেতে হবে।’’ মন্ত্রী বলেন, ‘‘যেহেতু আমার ব্যক্তিগত চাওয়া নেই, তাই কাউকে অনুকম্পা দেখানোর প্রয়োজন নেই। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ফাইলও সেভাবে উদ্ধার করা হবে। যদি কেউ সিন্ডিকেট বাণিজ্য করতে চান, সাবধান হয়ে যান। সিন্ডিকেটের যদি ন্যূনতম ইনভলব পাই, আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব।’’ শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির ওপর জিরো টলারেন্স। দুর্নীতি দূর করতে তিনি সরকার গঠন করেছেন। সেই সরকারের আমি একজন মন্ত্রী। আমার অধীনে কেউ দুর্নীতি করতে পারবে না। আমি সাড়ে তিন মাস হলো দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। অনেক কিছু টেকনিক্যাল বিষয় বুঝে উঠতে সময় লাগছে।’’ দুর্নীতিমুক্ত করতে রাজউক ও গৃহায়ণের সব কাজ এখন থেকে অনলাইনে করার ঘোষণা দেন গণপূর্তমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কাজের স্বচ্ছতা আনতে আগামী ১ মে থেকে রাজউকে এবং ১ জুন থেকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথা অনলাইনের মাধ্যমে হবে।’’ মন্ত্রী বলেন, ‘‘একজন নাগরিক বাড়িতে বসে অনলাইনে আবেদন করবেন। শুধু ব্যাংকের টাকাটা জমা দিয়ে রিসিভ নম্বরটা দিতে হবে। তারপর সব কাজ বাড়িতে বসেই করতে পারবেন। আমরা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ‘‘ফাইল যাতে হারিয়ে না যায়, তার জন্য আমরা ডাটাবেজ তৈরি করছি। সব ফাইল অনলাইনে রাখা হবে। ডাটাবেজটা কমপ্লিট হলে আবেদনকারীকে আর কোনো দপ্তরে যেতে হবে না। বাসায় বসে জনগণ তার ফাইলের অবস্থা জানতে পারবেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘এখন থেকে কাজের ফলাফল পেতে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হবে। কারণ আমি শুনতে চাই, কারা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। শুনতে চাই, কাদের কারণে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। বুঝতে চাই মানুষ কতটা সেবা পাচ্ছে। কারণ আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ এড়িয়ে যেতে পারি না।’’ শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘‘জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনেক ধরনের ফি বেশি ধরা আছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই, তারপরও ফি ধরা আছে। আমরা এগুলো পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সরকার ব্যবসা করে না। সুতরাং অযথা কোনো ফি ধরা হবে না।’’ জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. রাশিদুলের সভাপতিত্বে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আখতার হোসেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ এপ্রিল ২০১৯/নঈমুদ্দীন/বকুল