জাতীয়

‘প্রয়োজনেই বড় বাজেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত এক দশকের ব্যবধানে দেশের অর্থনীতির আকার অনেক বেড়েছে, পরিধি বেড়েছে। আমাদের সামনে আরো উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে, অর্থনীতির প্রয়োজনেই বাজেটের আকার বাড়ছে। এমনকি আমরা মনে করি বিশাল এই বাজেটও বাস্তবায়নযোগ্য। দেশের সব ধরনের অনলাইন নিউজপোর্টালের নিবন্ধনের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় এবার প্রথমবারের মতো কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করেন শেখ হাসিনা। বাজেট পরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করা। এখনই আমাদের প্রবৃদ্ধি দেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অবাক হয়। আগামীতে আমাদের প্রবৃদ্ধির ধারা আরো ইতিবাচক হবে।’ তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছর ধারাবাহিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে উচ্চ হার বজায় থাকায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে উন্নীত করার জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে।’  ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বাজেটের লক্ষ্য সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা, উন্নত করা, সমৃদ্ধশালী করা এবং স্বাধীনতার সুফল পাওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগে বাইরে গেলে বাংলাদেশকে কেউ চিনতো না। এখন আমাদের সবাই চেনে। এটাই আমাদের বড় পাওয়া।’ ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেকারত্ব ঘুচাতে স্টার্টআপ ফান্ড সৃষ্টি করা হয়েছে। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। কৃষি খাতের উন্নয়নে ২০ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে।’ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে।’ গ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রাম হবে আধুনিক শহর। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আরও গতি পাবে।দ্রুততম সময়ে ফাইভ-জির ব্যবস্থা করা হবে।’ ব্যাংকগুলোকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা মেনে চলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি, যাতে সুদটা সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সুবিধাও দিয়েছি। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেটা মানেনি। এবার বাজেটে নির্দেশনা দেওয়া আছে, এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। ঋণের সুদ যেন ডাবল ডিজিটে না হয়। তাহলে আমাদের বিনিয়োগ বাড়বে। বেশি আর চক্রবৃদ্ধি আকরে সুদ হতে থাকলে মানুষ আর ব্যবসা করতে পারবে না। এ দিকটাতে আমরা বিশেষভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনেক আইন আমরা সংশোধন করবো; সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক পত্রিকায় দেখেছি ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তারা অনেক বেশি টাকা চায়। শ্রমের মূল্য বেড়ে গেছে; কারণ, তাদের ডিমান্ড বেড়ে গেছে। আজকে বেকার লোকের অভাব আছে বলেই তো মূল্য বেড়েছে। সেটাও একটু বিবেচনা করে দেখেন।’ সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার বক্তব্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘যাদের মানসিকতা অসুস্থ তাদের কিছুই ভালো লাগে না। সবকিছুতেই তারা কিন্তু খোঁজে। তারা কী গবেষণা করেন আমি জানি না। একটা কিছু বলতে হবে। তাই বলেছে। এটা একটা অসুস্থতা।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুদকার। প্রসঙ্গত, সংসদে বাজেট ঘোষণার পরদিন বাজেটের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার রেওয়াজ ছিল অর্থমন্ত্রীর। এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৯/হাসান/শাহনেওয়াজ