জাতীয়

আরো উন্নত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক আরো উন্নত ও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।  এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গত একনেক সভায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব প্রশমন হবে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এই প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।  সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে অভিযোজন ও প্রশমন।  আলোচ্য প্রকল্পে প্রস্তাবিত বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও উন্নতিমূলক কার্যক্রম পরিবেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে এ প্রকল্প।  বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশে খাদ্যচক্র ও জীববৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  তাই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব প্রশমনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।  প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বন অধিদপ্তর।

এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- পার্কের বিদ্যমান পশু এবং পাখিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, মহাপরিকল্পনা/উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পশু ও পাখির আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও উন্নতিসাধন (তৃণভোজী, মাংশাসী, সরীসৃপ) ইত্যাদি, বিলুপ্ত ও বিপন্ন বন্যপ্রাণীর ইন-সিটু এবং এক্স-সিটু সংরক্ষণ, ইকো ট্যুরিজম সুবিধার উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্রের উন্নয়ন; বিদ্যমান অবকাঠামো, যানবাহন ও যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং নুতন পশু-পাখি সংগ্রহ।

প্রকল্প এলাকা কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পাশে ডুলাহাজরা রিজার্ভ ফরেস্ট ব্লকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক অবস্থিত।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।  এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি ৫১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।  এর পুরোটাই সরকার দেবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় (পৃষ্ঠা-৮৬৪, ক্রমিক নং-৮১) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আরো জানা গেছে, এই প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- অবকাঠামোগত উন্নয়ন (জোন-১) প্রি-এন্ট্রি জোন : (ক) প্রবেশ প্লাজা এবং সাফারি পার্কের সম্মুখভাগের উন্নয়ন, (খ) প্রবেশ ফটক থেকে টিকেট কাউন্টার পর্যন্ত ফুটপাথ ও রোড মিডিয়ান প্লান্টার তৈরি, (গ) প্রবেশ ফটক থেকে রাস্তার দুই পাশে আরসিসি প্রতিরক্ষা প্রাচীর, টেরাকোটাসহ সীমানা প্রাচীর ও বনায়নসহ ভূমি উন্নয়ন, (ঘ) প্রবেশ ফটক হতে প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত মেটালিক একসেস রোড নির্মাণ, (ঙ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য চত্বর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, (চ) দর্শনার্থীদের অপেক্ষা কক্ষ, রেলিং নির্মাণ, (ছ) গাড়ি পার্কিং স্থান নির্মাণ, (জ) পার্কের প্রবেশ ফটকের ডিজিটাল প্রবেশ ও বাহির ফটক নির্মাণ।

(২) অবকাঠামোগত উন্নয়ন (জোন-২) এন্ট্রি জোন: (ক) বন্যপ্রাণী জাদুঘর ও প্রকৃতি ব্যাখ্যাকেন্দ্র নির্মাণ, (খ) এম্ফিথিয়েটার নির্মাণ, (গ) তথ্য ও দিকনির্দেশনামূলক সাইনেজ তৈরি।

(৩) অবকাঠামোগত উন্নয়ন (জোন-৩) সাফারি জোন : (ক) বাঘ ও সিংহের সাফারি নির্মাণ, (খ) তৃণভোজী প্রাণীদের সাফারি নির্মাণ, (গ) পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন, (ঘ) বন্যপ্রাণীর জন্য নতুন বেষ্টনি নির্মাণ, (ঙ) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, (চ) লোনা পানি ও মিঠা পানির কুমিরের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির স্থান সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, (ছ) আহত, জব্দ ও উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণী রাখার জন্য রেসকিউ সেন্টার নির্মাণ, (জ) পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও পরিদর্শন পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ, (ঝ) দর্শনাথী ও বন্যপ্রাণী বেষ্টনির মাঝখানের সীমানা উন্নয়ন, (ঞ)  আবদ্ধ বন্যপ্রাণীর বেষ্টনিতে পানি সরবরাহ লাইন সংযোগ স্থাপন, (ট) সাফারি পার্ক এলাকার চারপাশে প্যাট্রোল মেটালিক রাস্তা নির্মাণ ও (ঠ) বন্যপ্রাণী হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন।

এ প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বিদ্যমান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া ও বিনোদনের সুবিধা উন্নয়নসহ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পার্কের উন্নয়ন।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৯/হাসিবুল/রফিক