জাতীয়

নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডায় বাংলাদেশের পক্ষে রায়

কানাডা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় আইনী লড়াইয়ে এক ধাপে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে অটোয়ায় বুধবার কানাডার ফেডারেল আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে রায় হয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশের সিটি নিউজ ও এয়ারড্রি টুডে পত্রিকা।

জাতির পিতাকে হত্যার দায়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা নূর চৌধুরী কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন, সেই অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য সে দেশের সরকারের কাছে চেয়েছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু কানাডা সরকার সে তথ্য দেয়নি বাংলাদেশকে। সে দেশের আইন অনুযায়ী মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণ করা যায় না এ যুক্তিতে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত ঢাকাকে জানিয়েছিল অটোয়া।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রিভিউ করলে অটোয়ার ফেডারেল আদালতের বিচারক জেমস ডব্লিউ ওরেইলি রায়ে বলেছেন, নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না।

সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

কানাডার এয়ারড্রি টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে সেদেশে যাওয়ার পর আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে নূর চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ হয়।

এদিকে গুরুতর অপরাধে জড়িত বলে তথ্য থাকায় ২০০৬ সালে কানাডা নূর চৌধুরী দম্পতির আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।

এরপর ২০০৯ সালে নূর চৌধুরী বহিষ্কার বা প্রত্যর্পন এড়াতে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে ‘প্রি-রিম্যুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ এর আবেদন করে।

উল্লেখ্য, কোনো অভিবাসন প্রত্যাশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়বে কি না- তা বুঝতে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ করা হয়।

গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার নূর চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে কানাডার সঙ্গে আলোচনা করে আসছে।

তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে একটি চিঠি দিয়ে জানতে চায় নূর চৌধুরীর ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের’ আবেদন কোন পর্যায়ে আছে।

কানাডা সেসব তথ্য দিতে অস্বীকার করলে গত বছরের জুনে ‘জুডিশিয়াল রিভিউয়ের’ আবেদন করে বাংলাদেশ। গত মার্চে এ বিষয়ে শুনানির পর বুধবার বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুর করে কানাডার আদালত উক্ত রায় প্রদান করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য। এরপর আইন করে বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেয়া হয়।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ওই মামলা কার্যত স্থগিত থাকে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর মামলার চূড়ান্ত রায় হয় এবং মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি) ও মহিউদ্দিন আহমদের (ল্যান্সার) মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।

কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান পলাতক থাকায় তাদের রায় কার্যকর করা যায় নি।

এদের মধ্যে নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে পর্যটক হিসেবে কানাডায় প্রবেশ করেন এবং এরপর থেকে সে দেশে অবস্থান করছেন। রাশেদ চৌধুরী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাকিরা কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। ঢাকা/বুলাকী/এনএ