জাতীয়

‘র‌্যাগিং বন্ধে আগে ব‌্যবস্থা নিলে আবরার হত্যাকাণ্ড ঘটত না’

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে র‌্যাগিং বন্ধে আগে ব্যবস্থা নিলে বুয়েটের ছাত্র আবরারের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটত না।

শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ইউনিভার্সিটিতে র‌্যাগিং হয়, সেটা আমরা সবাই জানতাম। অনেক পত্রিকায় সেগুলো নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু আমরা নীরব, প্রশাসন নীরব, ইউনিভার্সিটি অথরিটি নীরব, সবাই নীরব। যে আউটবার্স্ট (বিস্ফোরণ) ঘটল, আবরার মারা গেল, যখন প্রধানমন্ত্রী বলল, এটার বিচার হতে হবে, তখন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল। এখন সবাই বলছে, র‌্যাগিং হচ্ছে ইউনিভার্সিটি প্রশাসন দেখেনি কেন? সবাই বলছে, ভিসি কী করেছে এতদিন, দেখেনি কেন? এটা এখন কেন বলবে?

তিনি বলেন, যখন র‌্যাগিং হচ্ছিল, যখন ছাত্রদেরকে এভাবে মারধর করার একটা কালচার তৈরি হয়েছে, উপদেশ দেয়ার নামে গেস্টরুমে নিয়ে নির্যাতন করার একটা কালচার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে, তখন শিক্ষকরা কোথায় ছিল? আজকে শিক্ষক সমিতি আবরারের ঘটনা নিয়ে মিছিল করছে। আপনারা সেদিন কোথায় ছিলেন? যখন এই র‌্যাগিংগুলো আপনার প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে, আপনি কী করেছেন, কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? পুলিশকে রিপোর্ট করেছেন? করেননি। এ ব্যর্থতার দায় সকলের নিতে হবে।

যৌন হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'নারীরা মুখ খুলতে থাকলে যৌন হয়রানি অনেকটাই কমে আসবে। নারীদের প্রতি এক ধরনের অসহায় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকানো হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যৌন হয়রানির মনোভাব সৃষ্টি হয়। তাই আমাদেরকে এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। নারীরা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীদের বাদ দিয়ে সমাজ ও দেশ অচল। এমনকি পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্যও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ।

হাইকোর্টের রায়ের আলোকে সুপ্রিম কোর্টেও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ। তিনি বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে যে রায় দেয়া হয়েছিল, সে রায় আইনজীবী সমিতি বা সুপ্রিম কোর্ট পালন করেনি। আমরা যখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ে জবাবদিহিতা চাইব, তখন তো তারা পাল্টা আমাদের কাছে প্রশ্ন তুলবে। তাই অবিলম্বে ওই রায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে সোচ্চার ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

ল রিপোর্টার্স ফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. মাসউদুর রহমানের সঞ্চালনায় এবং সংগঠনটির সভাপতি ওয়াকিল আহমেদ হিরনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, ফোরামের সাবেক সভাপতি এম বদিউজ্জামান, অ্যাডভোকেট নাহিদা আনজুম কণা, অ্যাডভোকেট তৌহিদা খন্দকার, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জোবায়দা পারভিন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সীমা জহুর, ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান রাজু বক্তব্য রাখেন। ঢাকা/মেহেদী/রফিক