জাতীয়

‘নিজেদের স্বার্থেই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে’

সুন্দরবন একটাই। বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষায় নিজেদের স্বার্থেই সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সোমবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, সুন্দরবনের কারণেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের শক্তি হ্রাস পেয়েছে এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কম হয়েছে। তাই বাংলাদেশের স্বার্থেই সুন্দরবন সুরক্ষায় অবিলম্বে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বন বাঁচাতে এটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলা রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এবং সুন্দরবনকে ঘিরে যে পরিবেশবিনাশী শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অধিকাংশ ঝড়- জলোচ্ছ্বাসে সুদৃঢ় বর্ম হয়ে এই অঞ্চলকে রক্ষায় সুন্দরবনের অবদান অনস্বীকার্য। নিশ্ছিদ্র সুরক্ষা বেষ্টনী হয়ে ৬ দশমিক ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবন বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দূর্যোগপ্রবণ অঞ্চল বাংলাদেশের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষা করে আসছে। বাংলাদেশে আঘাত হানার আগেই সাম্প্রতিক প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের শক্তি হ্রাস করে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন। যা বুলবুলের প্রেক্ষিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট মহল থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘এর আগেও প্রলয়ংকরী সিডর, আইলাসহ আরও বহু মহাদুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপকতর হতে দেয়নি প্রকৃতির এই অপার সৃষ্টি। শুধু দুর্যোগ থেকে রক্ষায় নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবেই নয়, সুন্দরবন এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম রক্ষাকবচ। তাই সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশকেই সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে।’

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সুন্দরবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাদকীয় মোহে বৈশ্বিক ও স্থানীয় উদ্বেগ ও পরামর্শ উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কৌশলগত পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই সুন্দরবনের সন্নিকটে রামপাল, তালতলি ও কলাপাড়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বহুমুখী ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ ইতোমধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি কর্তৃক সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারপরও ‘নিজের পায়ে কুড়াল মারা’র মতো সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা উপেক্ষা করেই ‘সুন্দরবনের বিনিময়ে উন্নয়ন’- এর এই প্রক্রিয়া এখনো বন্ধ হয়নি।’

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১১ স্মরণ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘সুন্দরবনের মতো বিশ্ব ঐতিহ্য ঝুঁকিতে রেখে রামপালসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের পরিপন্থী। ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি লক্ষমাত্রা অর্জনের স্বার্থে অনতিবিলম্বে রামপাল, তালতলি ও কলাপাড়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকে লক্ষ করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করে, সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।’ ঢাকা/হাসিবুল/হাকিম মাহি