জাতীয়

বুড়িগঙ্গার অফটেকে ভৌত মডেল পরীক্ষা জরুরি

কয়েক দশক ধরে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা এবং বালু নদীর পানি প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভবে কমে গেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের অভ্যন্তরীণ বন্দরগুলোর পরিধি, শিল্প ও ব্যবসা কেন্দ্র ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

যত্রতত্র নৌযান নোঙ্গর, নদীর তীর দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে জলপথ সরু হয়েছে। শিল্পকারখানাগুলো থেকে নোংরা তরলের সঙ্গে বিষাক্ত রাসায়নিকের ক্রমাগত নিঃসরণ এবং নদী ও খালগুলোতে পলিথিনসহ নানাবিধ মানব বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে।

মে-২০১৯ এ ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রথম সংশোধিত’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর নিবিড় পরিবীক্ষণ করে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভগ (আইএমইডি)।  জুন ২০১৮ পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আইএমইডির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা, ধলেশরী ও তুরাগ নদী ঢাকা শহর ও বিভাগের ব্যবসা, পরিবহন ও কৃষিতে অসামান্য অবদান রেখে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  বিদ্যমান প্রকল্পটির ডিপিপি অনুযায়ী যমুনা থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য ১৬২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ধলেশরীর দৈর্ঘ্য ২, পুংলীর দৈর্ঘ্য ৬১ দশমিক ৫০, বংশাই নদীর দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ৫০ এবং তুরাগের দৈর্ঘ্য ৭৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার।

প্রকল্পের বিভিন্ন অগ্রগতির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মূল ডিপিপি অনুযায়ী প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯৪৪ কোটি টাকা।  প্রকল্পটি প্রথম সংশোধন করে ১৮১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় এক হাজার ১২৫ কোটি টাকা।  প্রকল্পটি ২০১০ সালের এপ্রিলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বাস্তবায়নের লক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন না করতে পারায় প্রকল্পটি প্রথম সংশোধন করে ২০১০ থেকে জুন ২০২০ সালে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আইএমইডি মতামত ও সুপারিশে উল্লেখ করেছে, পুরাতন গাণিতিক মডেল সমীক্ষা এবং সময়োচিত বেজ লাইন সমীক্ষা ব্যতিরেকে ফিজিবিলিটি স্টাডি নিয়ে ডিপিপি প্রণয়ন করায় প্রকল্পটি যথা সময়ে বাস্তবায়িত হয়নি। ভৌত মডেল সমীক্ষাটি শুধুমাত্র প্রধান উৎসমুখ থেকে পুংলী নদীর ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় টঙ্গি খাল ও বুড়িগঙ্গার অফটেকে পানি প্রবাহের যথার্থতা যাচাই করা হয়নি। তাই টঙ্গি খালের ও বুড়িগঙ্গার অফটেকে ভৌত মডেল পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। ভূমি অধিগ্রহণে ভৌত কাজের অগ্রগতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে সংশোধিত ডিজাইন মোতাবেক বাস্তবভিত্তিক ওয়ার্ক প্ল্যান প্রণয়নে নিবিড় তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করেতে হবে।

প্রকল্প পরিচালকের পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী অথবা প্রধান প্রকৌশলী পদ মর্যাদার কর্মকর্তা নিয়োগ করা প্রয়োজন। পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ সম্ভব না হয় তবে প্রধান প্রকৌশলী, কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে নিয়োগ করা যেতে পারে।

এছাড়া বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত না করে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনী করে এর কাজ সমাপ্ত করে প্রকল্পটি দৃশ্যমান করা দরকার। পুংলী নদীর ভাঙ্গন কবলিত স্থানসমূহে নদী তীর সংরক্ষণ কাজ, নদীর প্রশস্ত করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, নদী ও সেডিমেন্ট বেসিনের রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং ইত্যাদি কাজ দ্বিতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ ও নাব্যতা সংকট উত্তরণের জন্য প্রকল্পের প্রধান উৎসমুখে পানি প্রবাহ আনুপাতিক হারে বাড়াতে হবে।  

ঢাকা/হাসিবুল মিথুন/সাইফ/নাসিম