জাতীয়

নন্দিত কথাসাহিত্যিকের জন্মদিন

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা কথাসাহিত্যে সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্যদিকে তিনি আধুনিক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ।

এক নাগাড়ে তিনি ছিলেন ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। এ বিরল প্রতিভার মানুষটির ৭১ তম জন্মদিন আজ।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে তার জন্ম। তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ।

নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের জন্মদিনকে ঘিরে ভক্ত-অনুরাগীরা ভাসছেন স্মৃতির সাগরে। প্রিয় লেখকের নানা উক্তি, ছবি পোস্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তারা।

এই দিনটা না এলে, হিমু পথে পথে হলুদ পাঞ্জাবি পরে হাঁটতো না, রূপারা অমন অদ্ভুত সুন্দর করে কথা বলতে পারতো না, মিসির আলীর অমিমাংসিত জগতের সাথে আমাদের কখনো হয়ত পরিচয়ই ঘটতো না !

তার অসাধারণ লিখনশৈলীই তাকে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে চির অমর করে রেখেছে।

হুমায়ূন আহমেদের রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় উপন্যাস। তার রচিত প্রতিটি উপন্যাস পাঠক গ্রহণ করেছেন সাদরে। তার রচিত উপন্যাস ও গল্প নিয়ে টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। বিশেষ করে হিমু, মিসির আলী আর বাকের ভাইয়ের মতো চরিত্র তৈরিতে তিনি যে দক্ষতা দেখিয়েছেন তাতে তাকে ও তার সৃষ্টিকে আজীবন মনে রাখবেন পাঠক।

‘হিমু’ সিরিজের বই, ‘মিসির আলী’ সিরিজের বইসহ ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘অপেক্ষা’, ‘রুপার পালঙ্ক’, ‘লীলাবতী’, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা ‘জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প’এমন অসংখ্য সুপাঠ্য বই তিনি উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য।

তার বেশ বড় মাপের অবদান রয়েছে বাংলাদেশের নাট্যজগতে। এসব নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’ প্রভৃতি। যেগুলোর কথা দর্শক চিরদিন মনে রাখবেন।

তার রচিত উপন্যাস অবলম্বনে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ‘আগুনের পরশমণি’, ‘আমার আছে জল’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দুই দুয়ারি’, ‘দূরত্ব’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘প্রিয়তমেষু’ প্রমুখ। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।

হুমায়ূন আহমেদ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, শিশু একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক উল্লেখযোগ্য।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার অন্ত্রে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই নিউ ইয়র্কে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

একজন কিংবদন্তীর যে মৃত্যু নেই হুমায়ুন আহমেদের লেখা প্রতিটা গল্প, উপন্যাস, নাটকের জনপ্রিয়তাই তা প্রমাণ করে।বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে হুমায়ূন আহমেদ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা আজীবন পাঠকদের মনে আলো জ্বালাবে।

 

গোপালগঞ্জ (বশেমুরবিপ্রবি)/ রাশেদ/টিপু