জাতীয়

‘মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আরপি সাহা’

‘একেবারে শূন‌্য হাতে শুরু করে জীবন সংগ্রামে সফলতা লাভ করা অত্যন্ত কঠিন হলেও- কারো কারো জীবনে তা অর্জীত হয়েছে। সে জন‌্য কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, অদম্য সাহসিকতা ও ধৈর্য্য নিয়ে সামনের দিকে পথ চলতে হয়েছে তাদের। দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’

শুক্রবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে কুমুদিনী কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত রণদা প্রসাদ সাহার ১২৩তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালের ৯ নভেম্বর (বাংলা বর্ষ অনুযায়ী উত্থান একাদশীতে তার জন্ম দিন পালন করা হয়) সাভারের কাছে কাছৈড় গ্রামের নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে। বাবা দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার ও মা কুমুদিনী দেবীর চার সন্তানের (তিন ছেলে ও এক মেয়ে) মধ্যে রণদা ছিলেন দ্বিতীয়। বাবা ছিলেন দলিল লেখক আর মা গৃহিণী।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে গ্রামবাংলার আর দশজন শিশুর মতোই রণদারও হাতেখড়ি হলেও লেখা পড়া বেশি দূর আগায়নি। কারণ তিনি যখন সাত বছরের বালক, তখন সন্তান প্রসবকালে ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মাতা কুমুদিনী দেবী। তাই পুঁথি ও প্রতিষ্ঠানের বিদ্যা তাঁর অর্জন করা হয়নি। মা হারা রণদা মামা বাড়ি বেড়ে উঠেন। তবে পারিবারিক নানা কারণে তিনি কলকাতা চলে যান। এরপর তার এক কঠিন জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। কঠিন অধ্যবসায় তিনি বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হন। আর তা দুহাতে বিলিয়ে গেছেন আর্তমনবতার সেবায়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার একমাত্র সন্তান ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ তাকে পাকহানাদার বাহিনী স্থানীয় দালাল ওয়াদুদ মওলানা ও তার ছেলেদের প্রত্যক্ষ মদদে নারায়ণগঞ্জে থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর আর তারা ফিরে আসেননি।

প্রতিবছরের মত এবারও নানা আয়োজনের মাধ্যমে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থা ও মির্জাপুরবাসী দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার জন্মদিন পালন করেছে। এবারের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যে মানুষটি অর্থের অভাবে মায়ের চিকিৎসা করাতে পারলেন না, সেই মানুষটির প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় দুই হাজারেরও বেশি রোগীকে সহজলভ্য চিকিৎসা দান করা হচ্ছে। যে মানুষটি পাহাড় সমান দারিদ্র্যতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করলেন, সেই মানুষটিই এশিয়া মহাদেশের অন্যতম একজন দানবীর ও মানবসেবক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেন।’

তিনি বলেন, ‘একটি শিক্ষাকেন্দ্রের অভাবে যেখানে নারীশিক্ষা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, এই মানুষটির অবদানেই আজ হাজারো নারী সুশিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের নারীসমাজ আলোকিত করছে। যার প্রতিষ্ঠিত ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল, কুমুদিনী কলেজের মতো নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে আজও আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। আর সেই মানুষটি হলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের মির্জাপুর গ্রামের দানবীর রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহা।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল  বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের কারিগর এবং উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার। তিনি বাঙালি জাতিকে নতুন এক আশা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে উন্নীত করার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে বিশিষ্ট দানবীরে এই রণদা প্রসাদ সাহাকে অপহরণ ও হত্যা করায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারসহ জাতীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে তার হাত ধরেই।’

এরপর অর্থমন্ত্রী কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক‌্যাল কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমস, নার্সিং কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। সে সময় তিনি রোগীদের খোঁজ খবর নেন। এসময় একুশে পদকপ্রাপ্ত ও কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার পরিচালক মিস প্রতিভা মুৎসুদ্দী, পরিচালক শ্রীমতি সাহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা/হাসনাত/সনি