জাতীয়

ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে আইন ও ন্যায়বিচারের শাসন নিশ্চিতে সহায়তা করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই না যে, আমাদের মতো কেউ স্বজন হারানোর কষ্ট সহ্য করে (ন্যায়বিচারের জন্য) বছরের পর বছর অপেক্ষা করুক। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সকলেই ন্যায়বিচার ও আইনের কাছে সমান আশ্রয় লাভ করুক।’

শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ন্যায়বিচার’ শীর্ষক জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। খুনিকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করা হয়েছিল। হত্যাকারীদের নানাভাবে মদদ দেয়া হয়েছিল। হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি বিল জারি করা হয়। আমরা যারা ভুক্তভোগী ছিলাম, আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ ছিল না। সেই সময় দেশে ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’, এমন অবস্থা ছিল।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, বিচার বিভাগ সেই অবৈধ সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করার সাহসী ভূমিকার জন্য বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রাষ্ট্র পরিচালনায় আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সকল নাগরিক যাতে আইগত সহায়তা পায় সেজন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা- ন্যাশনাল লিগ‌্যাল এইড সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

নুসরাত হত্যাসহ অনেক মামলার রায় দ্রুত ঘোষণায় বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে অনেক বাধা ছিল। বাধা সত্বেও আমরা এসব মামলার বিচার করতে সক্ষম হয়েছি।

সন্ত্রাসীদের হামলায় দুজন বিচারক নিহতের ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, বিচারকদের নিরাপত্তা সবার আগে দরকার। এজন্য আমরা বিচারকদের আবাসন ও গাড়ি সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। বিচারকদের আবাসন ব্যবস্থা একটু ভিন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে। বিচার বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে বাজেটে পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিচারকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নতুন ভাতা চালু করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ধারাবাহিকতায় বিচার বিভাগেও ই-জুডিশিয়ারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ইংরেজিতে লেখার পাশাপাশি বাংলায়ও রায় লেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ, ইংরেজি না জানার কারণে রায়ে কী বলা হয়েছে তা অনেকেই জানতে পারেন না।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সরোয়ার এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর বক্তব্য রাখেন।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বিচার সংক্রান্ত কাজ ডিজিটালকরণ, কার্যকর আদালত প্রশাসন পরিচালনাসহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এবং সারা দেশের নিম্ন আদালতের বিচারকগণ সম্মেলনে অংশ নেন। ঢাকা/পারভেজ/রফিক