জাতীয়

১৬ জেলায় বন্ধ হতে চলেছে ট্রাক্টর

রংপুরের পিরগঞ্জের মো. বুলবুল হোসেন। নিজের জমি ছাড়াও গ্রামের অন্যদের জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করেন। শুধু চাষই নয়, পণ‌্য পরিবহনের কাজও করেন। ট্রাক্টর চালাতে গেলে তেল লাগে। তেল নিতে শহরে যেতেই হয়। আর এ তেল নিতে গিয়েই বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাকে। গুনতে হচ্ছে উচ্চ মূলের চাঁদা। এখন পরিস্থিতি এমন যে ট্রাক্টর দিয়ে চাষই বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

একই অবস্থা গাইবান্ধা সদরের মাজেদ বেপারীর। গত কয়েক মাস ধরেই তিনিও নানান সময়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। জমি চাষ করতে গেলে ট্রাক্টর প্রয়োজন। এতে সময় বাঁচে। কিন্তু শুধুমাত্র হয়রানির ভয়ে অনেকে ট্রাক্টর কিনতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রাচীন পদ্ধতিতে হালের গরু দিয়ে লাঙ্গল দিচ্ছেন জমিতে।

প্রতি বছর সাড়ে তিন-চার হাজার ট্রাক্টর বিক্রি হয় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। কিন্তু ভীতিকর প্রভাবে এ অঞ্চলে ট্রাক্টর বিক্রি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। উত্তরাঞ্চলের ১৬ টি জেলায় বিক্রি নেই বললেই চলে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের আওতায় আসেনি জমি চাষ। তাই চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানো ও মাটির গুনাগুন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ট্রাক্টর। তাছাড়া শ্রমিক সংকট মেটাতেও কার্যকর ভূমিকা রয়েছে যন্ত্রটি। জমি তৈরি ছাড়াও কৃষি পণ‌্য পরিবহন ও বহুমূখী ব্যবহারে কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে ট্রাক্টর। কিন্তু কৃষকের এ ধরনের আতঙ্গে ট্রাক্টর ব্যবহার অকেনটাই বন্ধের উপক্রম হতে চলেছে।

এ বিষয়ে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, ‘অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এ তিন মাসই হলো ট্রাক্টর বিক্রির উপযুক্ত মৌসুম। সারা দেশেই এখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। উত্তরবঙ্গে কৃষকের সঙ্গে চলমান ঘটনায় এক ধরনের ভিতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ট্রাক্টর চালানোর ক্ষেত্রে জটিলতা থাকলে তা সময় দিয়ে দ্রুত সমাধান করতে হবে। চালকদের লাইসেন্সিং করা এবং গাড়িগুলোকে রেজিষ্ট্রেশন করার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে কৃষকের মনে আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এতে যান্ত্রিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কৃষি খাত বিপাকে পড়তে পারে।’

এগ্রিকালচারাল ট্রাক্টর অ‌্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক্টর কার্যকরভাবে চালু রয়েছে। চলতি বছরে নতুন অনুষঙ্গ উত্তরাঞ্চলে ভীতিকর পরিবেশ। গত কয়েক মাস ধরেই চলতে দেওয়া হচ্ছে না ট্রাক্টর। ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেবার ঘটনা, তেলের পাম্প থেকে তেল নিতে গেলে কিংবা কোনোভাবে সড়কে উঠলে আটক করা হচ্ছে ট্রাক্টর।

পাশাপাশি মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বিক্রি বন্ধ থাকলে সরকারের যান্ত্রিকীকরণে চলমান ভর্তুকি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাই ট্রাক্টর মালিকদের এক বছরের মধ্যে ট্রাক্টরগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা যেতে পারে।

কীভাবে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের আরো সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি দেশে ট্রাক্টর পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতীয় মডেল অনুসরণ করার সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দেশের বাজারে ট্রাক্টর সংযোজন, আমদানি ও বিপনন করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ট্যাফে, এসিআই মোটর্সের সোনালিকা, র‌্যানকন ও কর্ণফূলী লিমিটেডের মাহিন্দ্র, মেটাল প্লাসের আইসার, পারফরমেন্স মোটরসের স্বরাজ, গেটকোর নিউ হল্যান্ড, ইফাদ অটোসের এসকর্ট ও এনার্জিপ্যাকের জন ডিয়ার ব্রান্ডের ট্রাক্টর বাজারে রয়েছে।

 

ঢাকা/হাসিবুল/সনি