জাতীয়

মহান বিজয় দিবস আজ

মহান বিজয় দিবস আজ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য বীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে এদিন বীর বাঙালি ছিনিয়ে এনেছিল লাল-সবুজের পতাকা। বিশ্বের মানচিত্রে ঠাই করে নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান বিজয়ের ৪৮ বছর পূর্ণ হলো আজ। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার সঙ্গে স্মরণ করছে সেইসব শহীদদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।

আজ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে জনতার ঢল। শ্রদ্ধার সাথে শহীদদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসের নানা আয়োজনে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জন রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টাল বাহানা শুরু করে শাসক গোষ্ঠী। ফলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান।

একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকচক্র ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে।২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায় বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় শেখ মুজিবকে।

তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় প্রতিরোধ। স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর কব্জা থেকে স্বাধীন করতে লড়াই শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। শুরু হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পথচলা। সেই থেকে বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে১৬ ডিসেম্বর।

বিজয়ের ৪৮ বছর পেরিয়ে এবার ৪৯তম বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের বিজয় দিবস এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং এর পরের বছর ২০২১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ।

মহান বিজয় দিবসে উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপ ধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এদিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা সমূহ। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ সমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানা গুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্র সমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া সমূহ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।

বিজয় দিবসট উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক -সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ’৭১ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে‘ শিখা চিরন্তন ’ বেদি সংলগ্ন ‘স্বাধীনতা চত্বরে বিস্তারিত অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে। এর আগে সকাল ৮ টায় ফোরাম নেতৃবৃন্দ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

আওয়ামী লীগের দুইদিনক্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

এছাড়াও সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ১৭ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা/এনএ/নাসিম