জাতীয়

সংসদ সদস্যদের মুখোমুখি শিশুরা

দেশের ৩০০ নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী সমান সংখ্যক শিশু তাদের দাবি, উদ্বেগ ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মুখোমুখি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ইউনিসেফের আয়োজনে ঢাকায় ‘প্রজন্ম সংসদে’র প্রথম জাতীয় অধিবেশনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মুখোমুখি হয় তারা।

প্রজন্ম সংসদ ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের একটি যৌথ উদ্যোগ। এটি তরুণ জনগোষ্ঠীকে এমন সব নীতিমালা নিয়ে আলোচনায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়, যা তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত কল্যাণের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ছয় লাখ কিশোর-কিশোরী এই উদ্যোগে যোগদান করেছে- যেখানে সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৩০০টি গ্রুপ গঠন করা হয়।

বিভিন্ন শ্রেণি থেকে আসা শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর গ্রুপগুলো থেকে জাতীয় অধিবেশনের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছে অনলাইন গ্রুপগুলোতে তাদের অংশগ্রহণের ব্যাপকতার ভিত্তিতে।

অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিশু সাংসদরা তাদের উন্নয়ন প্রতিবন্ধকতাগুলো অপসারণে নীতিমালার প্রতিবিধান এবং শিশুদের জন্য সরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর দাবী জানায়।

তারা নিজেদের মধ্যে গ্রুপওয়ার্ক করার সময় ১৫টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে বাল‌্য বিয়ে, শিশুশ্রম, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তন, শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, সড়ক নিরাপত্তা, শিশুদের মানসিক সুস্থতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, যুব ও কর্মসংস্থান, শিশুর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, তথ্য প্রাপ্তি এবং সরকার কর্তৃক শিশুদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো।

পরে একটি ছায়া সংসদ অধিবেশনে জাতীয় সংসদের সম্মানিত ডেপুটি স্পিকারের সামনে তাদের সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়।

বিপুল সংখ্যক শিশুর উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এবং শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের প্রধান উপদেষ্টা ফজলে রাব্বী মিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে এবং শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি শামসুল হক টুকু এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়াও অন্যদের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব কোপরেশন মাউরেজিও চান এবং ইউনিসেফের বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ভীরা মেনডনকা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।

ভীরা মেনডনকা বলেন, ‘‘আমরা এই উদ্যোগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করি। কারণ, এটি জাতীয় সংসদ সদস্যদের জন্য তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার শিশু এবং তরুণদের মতামত, আগ্রহ এবং উদ্বেগ সরাসরি শুনতে একটি কাঠামোবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।

‘দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী শিশুদের জন্য এটি একটি অনন্য সুযোগ। নিজেদের ভোটাধিকার না থাকায় তারা অন্যদের ওপর নির্ভর করে, যারা তাদের অধিকারকে সম্মান করতে, সমুন্নত রাখতে এবং ভোগ করতে দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

শিশুদের অনুপ্রেরণামূলক অংশগ্রহণের প্রশংসা করে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতি সুবিধার (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাকে অনেক স্বস্তি দিয়েছে যে, দেশের তরুণদের নেতৃত্বে জনমিতি সুবিধাজনক এই অবস্থানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভার এখন তোমাদের মতো দায়িত্বশীল তরুণ নাগরিকদের ওপর এসেছে।’

অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে প্রজন্ম সংসদের লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের ভাব প্রকাশ করতে এবং তাদের দাবি ও উদ্বেগ তুলে ধরতে সহায়তা করা এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি বছরে দু’বার মুখোমুখি আলাপচারিতার মাধ্যমে শিশু এবং নীতিনির্ধারকদের মাঝে একটি সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। ঢাকা/হাসান/সনি