জাতীয়

রেল ইঞ্জিন: ১৯ বার নয়, একবার

কোরিয়া থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৭০টি ইঞ্জিন সংগ্রহে ১৯ বছরে ১৯ বার এজেন্সি ফি না দিয়ে একবার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি কোরিয়ার ঋণদাতা সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

৭০টি রেল ইঞ্জিন কিনতে মোট দুই হাজার ৬৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেবে কোরিয়ান কোম্পানি। ঋণের সুদের হার লাইবর প্লাস ১ দশমিক ৬০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার শেরে বাংলানগরে অর্থমন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনমনীয় ঋণ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ‘৭০টি মিটার গেজ (এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকোমোটিভ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ক্রয় চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য  ঋণের শর্তাবলী অনুমোদন দেয়া হয়।  বৈঠকে  ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিনিধি ও কোরিয়ার সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে কোরিয়া থেকে ৭০টি ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে পাঠানো তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা হয়। এতে দেখা যায়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ২০১১ সালের জুলাই হতে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে ৭০টি মিটার গেজ (এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে একনেক অনুমোদন করে। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১১ সালের জুলাই হতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে সংশোধিত ডিডিপি ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় জিওবি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়টি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করে। এতে জিওবি অর্থায়নে অথবা যে কোন ক্রেডিট লাইনে অথবা যে কোন সহজ শর্তযুক্ত ক্রেডিট লাইনে অর্থ সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হয়। এর মাধ্যমে যেটি দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, সেটি করার জন্য নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, অন্য কোন উৎস হতে নমনীয় ঋণ সহায়তা বা জিওবি অর্থায়নের আশ্বাস না পাওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পরবর্তীতে অর্থ বিভাগের অনাপত্তি গ্রহণ করে। ডিপিপির শর্ত মোতাবেক অর্থায়নের জন্য ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১ম দফায়, ২০১৩ সালের ৪ জুলাই ২য় দফায় এবং উল্লিখিত দুই দফায় কারিগরিভাবে কোন রেসপনসিভ দরদাতা না পাওয়ায় টেন্ডার ডকুমেন্ট এবং টেকনিক্যান স্পেসিফিকেশন হালনাগাদ করে। পরে আবারো ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ৩য় দফা দরপত্র আহ্বান করে ২০১৫ সালের ৩১ মে তারিখে উম্মুক্ত করা হয়। এতে মোট ২৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দলিল ক্রয় করলেও নির্ধারিত সময়ে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রস্তাব দাখিল করে। কোরিয়ার কোম্পানি মেসার্স হুন্দাই রোটেম এবং স্পেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভোসল এস্পেনা, এই দুই প্রতিষ্ঠানও দরপ্রস্তাব দাখিল করে। এতে মেসার্স ভোসল এস্পেনা সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে। এছাড়াও কারিগরি বিবেচনায় পিছিয়ে পড়ে। ফলে কোরিয়ান কোম্পানি  মেসার্স হুন্দাই রোটেম কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। তবে প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।

জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ইঞ্জিন আছে ২৮১টি। এর মধ্যে ১৮৬টি মিটারগেজ ও ৯৬টি ব্রডগেজ। এসব ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর। অথচ এরি মধ‌্যে ১৬৮টি ইঞ্জিনের বয়স ৩০ বছর অতিক্রম করেছে।

পুরনো এসব ইঞ্জিনের মধ্যে রয়েছে ১১০টি মিটারগেজ ও ৫৮টি ব্রডগেজ। ব্যয়বহুল মেরামত ও অধিক জ্বালানি ব্যয়ের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব রেল ইঞ্জিন চলমান রাখা হয়েছে। এছাড়া অনেক পুরনো মডেল হওয়ায় মেরামতের সময় প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশও পাওয়া যাচ্ছে না এখন। এই সংকট নিরসনে ৭০টি মিটারগেজ রেল ইঞ্জিন কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কোরিয়া ট্রেড ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন(কেএসইউআারই), এক্সিম ব্যাংক অব কোরিয়া(কে-এক্সিম) এবং কমার্শিয়াল ফ্যাসিলিটির নিকট থেকে। তবে ৭০টি রেল ইঞ্জিন দিতে প্রতি বছর ২০ হাজার ডলার করে এজেন্ট ফি দাবি করে বসে কোরিয়ান কোম্পানি, প্রতি ডলার সমান ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশী মুদ্রা দাঁড়ায় প্রায় ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।। এতে করে বাংলাদেশকে দিতে ১৯ বছরে মোট ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। প্রতি ডলার সমান ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশী মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে কোরিয়ার এমন প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বৈঠকে এজেন্সি ফি একবার দেওয়ার কথা বলেন এবং বৈঠকে এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা/হাসনাত/সাজেদ