জাতীয়

ঘর থেকে বের হলেই পড়তে হবে জেরায়

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। এর প্রাদর্ভাবরোধে সচেতনমূলক নানা কর্মকাণ্ড গ্রহণে করেছে সরকার। সঙ্গে জনগণকে ঘর থেকে বের না হতেও নিষেধ করেছে। আর যারা ঘর থেকে রাস্তায় বের হবেন তাদের পড়তে হবে জেরার মুখে।

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক থেকে অলি-গলি সব ফাঁকা। দুই একজন অতি প্রয়োজনে বের হলেও তাদের চোখে মুখে করোনার আতঙ্ক। মাক্সসহ অনেকেই হ্যান্ডগ্লাভস পরেছেন। এর মধ্যে পুলিশের টহল অব্যাহত ছিল। বিভিন্নস্থানে কয়েকজনকে জেরা করতে দেখা গেলে পুলিশকে। একই সঙ্গে কোথাও লোকজন জড়ো হলে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং দোকানপাটও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আর প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন একেবারে নেই বললেই চলে। দুই একটি রিকশার দখলে রেখেছে রাস্তাগুলো। মোড়ে মোড়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

দুপুরে পুলিশের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা জনগণকে করোনাভাইরাসের বিষয়ে সচেতন করতে নানা কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি। এরপরও জনগণকে যেন নিরাপদে রাখা যায় তারই অংশ হিসেবে তাদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করার কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে অনুরোধ থাকবে কেউ যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হন। সে ক্ষেত্রে তাদের জেরার মুখোমুখি হতে হবে। উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ আদেশ অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পুলিশ জানিয়ে, পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে লোকজন যাতে রাস্তায় বের না হতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে।

একাধিক থানা পুলিশের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বেশিরভাগ সময়ই তাদের এখন কাটছে মানুষজনকে ঘরে রাখতে। সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত আছে। প্রতি থানায় দুটি করে বিশেষ টিম করা হয়েছে। যেন জনগণ কোনভাবেই রাস্তায় না থাকতে পারেন এবং একই সঙ্গে জনসমাগম থাকতে না পারে সে ব্যবস্থা করা।

বৃহস্পতিবার থেকে এ কারণে বলা যায় এক প্রকার লকডাউন শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাইরাসটি মোকাবিলায় সবাইকে সহযোগিতাও করতে হবে।

এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্র জানায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কাজ শুরু করেছে সশস্ত্র বাহিনী। রাস্তায় টহল দেওয়ার কাজ করছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

আইএসপিআর- এর সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় সামাজিক দূরত্ব এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থার জন্য বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী নিয়োজিত হয়েছে। ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার-এর মাধ্যমে স্বশস্ত্র বাহিনী এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।

তিনি বলেন, মঙ্গলবারই নির্ধারিত ব্রিগেড কমান্ডারেরা বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করেছেন। বুধবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিট অধিনায়কেরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন। সেনা মেডিকেল অফিসার সমন্বয় দলের সঙ্গে গেছেন।

তিনি সবাইকে সরকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের পরামর্শ ও সতর্কতা মেনে চলার আহ্বান জানান।

আইএসপিআর সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সেনাবাহিনীর পাঠানো সমন্বয় দলগুলো বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন কর্মসূচি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর পরিকল্পনা নেবে। সেই পরিকল্পনা নেওয়ার সময় বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে, জেলার করোনা পরিস্থিতির ওপর জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি মূল্যায়ন এবং এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন ও ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা।

দ্বিতীয়ত, জেলা প্রশাসনে রাখা গত এক মাসে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান ও বিস্তারিত তথ্য। তৃতীয়ত, জেলায় সেলফ কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান করা।

সেলফ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের নেওয়া পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি। সেলফ কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এমন ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান। কোয়ারেন্টাইন কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রগুলো। আর সপ্তমত, দায়িত্বে যেসব ব্যক্তি থাকবেন তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সংখ্যা ঠিক করা।

 

ঢাকা/হাসান/মাকসুদ/এসএম