জাতীয়

নিরবে চোখের জল ফেলে শিশু মনিরুল

জন্মের পর থেকে চার বছর বয়স পর্যন্ত সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছিল শিশু মনিরুল ইসলাম। চার বছর পার হতেই শরীরের বিভিন্ন অংশের রং স্বাভাবিকতা হারিয়ে সাদা বর্ণ ধারণ করতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে যায় গোটা দেহে। সাদা বর্ণ ধারণ থেকে তার মাথার চুলও বাদ পড়েনি। দরিদ্র বাবা-মা স্থানীয় চিকিৎসকদের দারস্থ হলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে সন্তানকে নিয়ে হতাশায় ভুগছে পুরো পরিবার। সমবয়সীরা বিভিন্ন উপনামে ডাকায়, অবহেলার দৃষ্টিতে দেখায় প্রায়ই কেঁদে কেঁদে নিরবে চোখের জল ফেলে শিশু মনিরুল।

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের চরকৈজুরী গ্রামের দিনমজুর বাবা সোনাউল্লাহ মিয়ার ছেলে মনিরুল। সন্তানকে নিয়ে তার আক্ষেপ আর হতাশার কথা রাইজিংবিডির কাছে তুলে ধরেন।

সোনাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘চার বছর ধইরা এইগুলো হইছে। ছাওয়াল এখন ক্লাস ফোরে পরে। ঢাকার এক ডাক্তার শাহজাদপুরে আসে। উনাকে দিয়ে চিকিৎসা করাইছি। আবার কবরাজি মতে চিকিৎসা করাইছি। গাছ-গাছালি শরীরে ঘষছি। টেহা-পয়সার কারণে আমি আর চিকিৎসা কইরবের পারতেছি না ছাওয়ালের। আমার মতো যতটুকু পারছি চেষ্টা করছি। অনেক ভাবে অনেক মানুষ কথা কয়। মনের দুঃখে আমার ছাওয়াল সময় সময় বইসা কান্দে’। এসময় তিনি সরকার বা কোনো বিত্তবানকে সন্তানের চিকিৎসায় এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।   

শিশু মনিরুল কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, আমার শরীর এমন হওয়ায় সবাই বিভিন্ন নামে ডাকে। তখন আমার খুব খারাপ লাগে। বইসা বইসা কান্দি।’ নিজের শরীরের রং আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক এটাই মনে প্রাণে চাওয়া শিশু মনিরের।

শরীরের রং সাদা বর্ণ ধারণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, শরীরে মেলানিন নামক পদার্থ কমে যাওয়ার কারণে দেহের রং স্বাভাবিকতা হারিয়ে সাদা বর্ণ ধারণ করে। এটা Vitiligo বা শ্বেত রোগ বলা হয়। এ রোগের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। যে চিকিৎসা রয়েছে তা কারো ক্ষেত্রে কাজ করে, কারো ক্ষেত্রে করে না। তবে শিশু হোক আর বড় হোক এই রোগ তার স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না। শ্বেত রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা মোটেই উচিত নয়। ঢাকা/মেহেদী/এসএম