নিজস্ব প্রতিবেদকঢাকা, ২৪ জানুয়ারি : ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস আজ। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরাচারি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী বাংলাদেশের জনগণ এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়।
জাতির মুক্তির সনদ খ্যাত ৬ দফা এবং পরে ছাত্র সমাজের দেয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে এই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। সে সংগ্রামের মাধ্যমে জনতার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় তৎকালীন আইয়ুব সরকার। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঊনসত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ১৯৬৯ সালের এই দিনে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক তাত্পর্যপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, পরবর্তীতে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণভুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়।প্রধানমন্ত্রী শহীদ মতিউরসহ গণ-অভ্যুত্থান দিবসের সব শহীদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি তাদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।অন্যদিকে দেশের বর্তমান অবস্থাকে ক্রান্তিকাল আখ্যা দিয়ে গণঅভ্যুত্থান দিবসের অনুপ্রেরণায় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দেশবাসীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।এ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ছাত্র, পেশাজীবী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ আসাদ পরিষদ সকালে শহীদ মতিউর স্মৃতিসৌধে (নবকুমার ইনস্টিটিউট, বকশীবাজার, ঢাকা) শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সকাল ৯টায় বকশীবাজার নবকুমার ইনস্টিটিউটে শহীদ মতিউর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পন করবে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ভাসানী আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে র্যাযলি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় মুক্তির মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়ক দ্বীপে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।ইতিহাসে এই দিনঐতিহাসিক ২০ জানুয়ারি ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২, ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে ঢাকায় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি এই অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়।ঊনসত্তরের এদিন ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণীর ছাত্র কিশোর মতিউর ও রুস্তম শহীদ হন। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়।বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয়। জনগণ আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেট নামকরণ করে। আর ঊনসত্তরের গন-অভ্যুথানের পথ ধরেই বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশ। রাইজিংবিডি / এনআর / লিমন