করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ, সর্বোপরি বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনে মতৈক্যে পৌঁছেছে জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলো। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রস্তাবিত রেজুলেশনটির বিষয়ে সদস্য দেশগুলো একমত পোষণ করেছে।
সোমবার (১৮ মে) থেকে শুরু হওয়া ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে রেজুলেশনটি গৃহীত হওয়ার কথা রয়েছে। করোনাভাইরাস এবং এ জাতীয় মহামারি মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে বিশেষভাবে বিবেচনা করার কথা উল্লেখ রয়েছে এতে। রেজুলেশনটিতে সমর্থন দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশও।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন রাইজিংবিডিকে বলেন, এপ্রিলে প্রস্তাবটি প্রাথমিকভাবে উপস্থাপিত হয়। এ বিষয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল অংশ নেয় এবং দর কষাকষির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রস্তাবে কিছু বিষয় আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছিল। আমরা আমাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছিলাম। এখন একটি চূড়ান্ত রূপ নিতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই রেজুলেশনটি আমরা কো-স্পন্সর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর ফলে রেজুলেশনের ওপর আমাদের একটি মালিকানা থাকবে।
প্রসঙ্গত, সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শামীম আহসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি দল এই সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে গত ১৫ এপ্রিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রেজুলেশনটি প্রস্তাব করে। রেজুলেশনটির ওপর প্রায় এক মাস ধরে আলোচনা ও দরকষাকষির পর গত ১২ মে রাষ্ট্রগুলো একমত পোষণ করে আলোচনা শেষ করেছে। জেনেভাতে সোমবার (১৮ মে) থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য কো-স্পন্সরদের সঙ্গে রেজুলেশনটি উপস্থাপন করবে ইইউ। আশা করা হচ্ছে, এই অ্যাসেম্বলিতে এটি গৃহীত হবে।
সূত্র জানায়, উন্নয়নশীল দেশের জন্য যে তিনটি বিষয় সবচেয়ে উদ্বেগের ছিল সেগুলোর বিষয়ে এই রেজুলেশন সমাধান দিয়েছে। তিনটি বিষয় রেজুলেশনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। এগুলো হচ্ছে—ওষুধ ও চিকিৎসা পণ্যসামগ্রীর দাম সুলভ করা। অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশের গরিব মানুষরা যাতে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী কিনতে পারে, দ্বিতীয়ত চিকিৎসাসামগ্রী সমতার ভিত্তিতে বণ্টন এবং সমাধিকার (এফোর্ডাবিলিটি, ইক্যুয়িটি ও এক্সেস)।
রেজুলেশনটিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেকগুলোর স্বার্থ উপেক্ষিত হলেও বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশের তীব্র দর কষাকষির কারণে সুলভ দাম, ওষুধে অধিকার, সমতা ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে বণ্টন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থাসহ আরও কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই রেজুলেশনের আরেকটি দিক হচ্ছে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে এবং এটি কিভাবে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে সেটি গবেষণা করে বের করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশংসা করে ওই রেজুলেশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহাসচিব, প্রতিটি সরকার ও অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থা ও স্টেক হোল্ডারদের কি করণীয় সে সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশনা আছে। মহামারি মোকাবিলার জন্য উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে বিশেষভাবে বিবেচনা করার কথাও বলা আছে।
হাসান/সাইফ