জাতীয়

তিন ধাপে অবৈধভাবে ইউরোপে পাঠায় দালাল

অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে মানবপাচারের ক্ষেত্রে তিন ধাপ অনুসরণ করে দালালরা।  এরপর বাংলাদেশ, ভারতের কলকাতা, মুম্বাই হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত, দুবাই হয়ে মিশর ও পরে লিবিয়ার বেনগাজী-ত্রিপলী পাঠানো হয় বিদেশ গমনেচ্ছুদের। এরপর সেখান থেকে সাগরপথে ইউরোপে পাঠানো হয়।

এক্ষেত্রে বিদেশ গমনেচ্ছুক নির্বাচন, বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় পাঠানো এবং লিবিয়া থেকে ইউরোপ পাঠানো- এ তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয়।

সোমবার (০১ জুন) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান।  এর আগে ভোর ৫টায় রাজধানীর গুলশানের শাহজাদপুর থেকে  কামাল উদ্দিন ওরফে হাজী কামাল (৫৫) নামে এক মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

রকিবুল হাসান বলেন, ‘বিদেশ গমনেচ্ছুক নির্বাচনের সময় এই চক্রের দেশীয় এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষদের অল্প খরচে উন্নত দেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে।  ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়।  বিদেশ গমনেচ্ছুকদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকিট কেনা সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানে হয়।  পরে তাদেরকে এককালীন বা ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে ইউরোপের পথে পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ’

‘ইউরোপ পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালরা ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার বেশি অর্থ নিয়ে থাকে। এরমধ্যে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার আগে, বাকি টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার পর আদায় করা হয়। ’

তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে লিবিয়ায় পাঠানোর ক্ষেত্রে দালাল চক্র বেশ কয়েকটি রুট ব্যবহার করে থাকে। রুটগুলোতে সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী মাঝে মধ্যে পরিবর্তন অথবা নতুন রুট নির্ধারণ করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়ায় পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-কলকাতা-মুম্বাই-দুবাই- মিশর-বেনগাজী-ত্রিপলী (লিবিয়া) রুট ব্যবহার করা হয়।’

রকিবুল হাসান বলেন, ‘দুবাইয়ে পৌঁছে ইউরোপ গমনেচ্ছুকদের বিদেশি এজেন্টদের তত্ত্বাবধানে ৭ থেকে ৮ দিন রাখা হয়। বেনগাজীতে পাঠানোর আগে সেখান থেকে কথিত “মরাকাপা” নামে একটি ডকুমেন্ট দুবাইতে পাঠানো হয়। যা দুবাইয়ে অবস্থানরত বিদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে ভিকটিমদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারপর ডকুমেন্টসহ বিদেশি এজেন্ট মিশর ট্রানজিট নিয়ে লিবিয়ার বেনগাজীতে পাঠায়। বেনগাজীতে বাংলাদেশি এজেন্ট তাদেরকে বেনগাজী থেকে ত্রিপলীতে স্থানান্তর করে।’

‘ভিকটিমরা ত্রিপলীতে পৌঁছানোর পর সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি কথিত কয়েকজন এজেন্ট তাদের গ্রহণ করে। তাদেরকে ত্রিপলীতে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করানো হয়। তারপর ত্রিপলীতে অবস্থানকালীন সময়ে এজেন্টদের দেশীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে ভিকটিমদের আত্মীয়দের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। ভিকটিমদের ত্রিপলীর বন্দর এলাকায় একটি সিন্ডিকেটের কাছে অর্থের বিনিময়ে ইউরোপে পাচারের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর করা হয়। সিন্ডিকেট তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখে। তারপর সমুদ্রপথে অতিক্রম করার জন্য নৌ-যান চালনা এবং দিক নির্ণয়যন্ত্র পরিচালনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের ওপর নানাবিধ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট দিনে ভোরে এক সঙ্গে কয়েকটি নৌ-যান লিবিয়া হয়ে তিউনেশিয়া উপকূলীয় চ্যানেল হয়ে ইউরোপের পথে রওনা দেয়। ’

গত ২৮ মে লিবিয়ায় মিজদাহ শহরে গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত এবং ১১ বাংলাদেশি গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় মাদারীপুরের রাজৈর থানা ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় মানবপাচার বিরোধী আইনে ২টি মামলা দায়ের করা হয়। ঢাকা/নূর/জেডআর