জাতীয়

ভাড়া নিয়ে গণপরিবহনে ‘গণনৈরাজ্য’

টানা ৬৬ দিনের ছুটি শেষে গত ১ জুন থেকে চলাচল শুরু হয় গণপরিবহনের।  সীমিত যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয় বাস ভাড়া।  তবে সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে তা গণপরিবহনে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।

রাজধানীর কাজলা থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করা বাসে আগে ভাড়া নেওয়া হতো ১০ টাকা।  এখন তা নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা, মানে দ্বিগুণ। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। 

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ করেন মো. বাবুল।  মৌচাক থেকে নীলাচল পরিবহনে উঠেছেন নিউমার্কেট যাবেন।  কন্ডাক্টর ভাড়া চাইলে তাকে ৩০ টাকা দেন।  এ সময় যাত্রীর কাছে আর ১০ টাকা দাবি করেন কন্ডাক্টর।  এ নিয়ে দুজনের মধ্যে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা।

বাবুল জানান, গতকালও ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে গেছি।  এখন আরও ১০ টাকা বেশি চাইছে। তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। আমাদের মধ্যবিত্তের দেখার যেন কেউ নেই।

একই বাসে নুরুল ইসলাম তুষার নামে আরেক যাত্রীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান ওই কন্ডাক্টর।  নুরুল ইসলাম রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ থেকে উঠেছেন। গন্তব্য আরিচা ঘাট। যেখানে আগে ভাড়া ছিল ১৩০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি ভাড়াসহ মোট ভাড়া আছে ১৯০ টাকার মতো।  কিন্তু কন্ডাক্টর চাইছেন ২৩০ টাকা। আবার বলছেন, এই ভাড়া দিলে যাবেন, না হলে যেটুকু এসেছেন সেটুকুর ভাড়া দিয়ে নেমে যাবেন।

নুরুল ইসলাম তুষার জানান, তাকে আমি সঠিক ভাড়া দিয়েছি।  তারপরও বেশি ভাড়া চাইছে।  ভাড়া না দিলে নেমে যেতে বলছে। তাকে কেন বেশি ভাড়া দেবো। তারা কোনো নীতিমালাই মানছেন না।  ভাড়া নিয়ে যেন গণনৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।

নীলাচল পরিবহনের কন্ডাক্টর মো. মিজান দাবি করেন, সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা তার থেকেও ভাড়া কম নিচ্ছি।  যাত্রীদের বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিজান বলেন, সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে।  আর গাড়ির সিট খালি থাকায় ১০ শতাংশ ভাড়া আরও বেশি নিচ্ছি।  প্রয়োজনে সামনে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে যাত্রীরা অভিযোগ করুক।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিভিন্ন সংগঠন সরকারকে গণপরিবহনের ভাড়া না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে।

গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই ভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে আপত্তি করে আসছি। বলেছিলাম, ভাড়া বাড়ালে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন না। কারণ সরকার যখন বাস ভাড়া বাড়ায় এক টাকা তখন মালিকপক্ষ ভাড়া আদায় করে তিন টাকা। আমরা বর্তমান বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। কোথাও কোথাও ভাড়া দ্বিগুনও নেওয়া হচ্ছে।  এ অবস্থায় সরকারকে কঠোর হতে হবে।  কঠোর না হওয়ার বিকল্প নেই। কারণ মানুষকে তো বাঁচাতে হবে। করোনা থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে আর্থিক সংকটে ফেলবেন এটাতো হতে পারে না।’

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, সরকার এবং শ্রমিক মালিকরা বসে বাস ভাড়া বাড়িয়েছে।  কিন্তু ভাড়াটা দেবে যে সাধারণ জনগণ তাদের কোনো মতামত এখানে নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ আর সরকার করোনাকালীন সময়ে তারা কোনো চাঁদা নেবেন না।  চাঁদা যেহেতু বন্ধ, টোল আর তেলের দাম সমন্বয় করলে বাসের ভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজনই ছিল না। ঢাকা/মামুন খান/জেডআর