জাতীয়

কামাল লোহানী ছিলেন আপসহীন ব্যক্তিত্ব

কামাল লোহানী দেশের একটি নক্ষত্র। এদেশের সাংবাদিকতা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কামাল লোহানী শুধু একটি নাম নয়, ইতিহাসের অংশ।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের মুক্তিযুদ্ধ; স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনসহ সর্বক্ষেত্রে তার প্রগাঢ় উপস্থিতি। সদা ছিলেন আপসহীন এক ব্যক্তিত্ব।

শনিবার (২০ জুন) গুণী এ ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার শুভাকাঙ্ক্ষিরা সৃতিচারণ করেন।

কামাল লোহানী সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সবসময় নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। এদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কামাল লোহানী হিসেবে পরিচিত হলেও, তার পুরো নাম কিন্তু আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে তার জন্ম। বাবা আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী। মা রোকেয়া খান লোহানী।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, কামাল লোহানী ছিলেন একজন খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক-কলামিস্ট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তিনি গভীরভাবে লালন করতেন। তার চলে যাওয়া আমাদের এ নতুন প্রজন্মের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। আমি সবার কাছে আশা করবো, তার রেখে যাওয়া যে কার্যক্রম সেটি যেন আমরা পরিস্ফুটিত করতে পারি, লোহানীর আদর্শে সুন্দরভাবে নিজেদের জীবনে ধারণ করতে পারি, সেই চেষ্টা করতে সবার কাছে আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, কামাল লোহানীর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি কখনোই সরকারের বা বিরোধীদলের কারোই আনুকূল্য কামনা করেননি। যখনি যেখানে একটি অসঙ্গতি দেখেছেন নির্বিঘ্নে তিনি সেটার সমালোচনা করেছেন। সাংস্কৃতিক, সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি সবসময়ই খোঁজ-খবর নিতেন। তার এ চলে যাওয়া আমাদের জন্য একটি অপূরণীয়ে ক্ষতি। তিনি আমাদের জাতীয় চেতনায় অবদান রেখে গেছেন সেটি আসলে কখনো পূরণ হওয়ার মতো নয়।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, কামাল লোহানীর চলে যাওয়া প্রগতিশীল সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক অপূরণীয়ক্ষতি। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি অঙ্গনে তার অবাধ বিচরণ ছিল। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার যে অবদান তিনি রেখে গেছেন সেগুলো ধরে রাখার মধ্য দিয়েই আমরা মূলত তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে পারবো। আমরা তার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজকে সম্মানের সঙ্গে বরণ করে নেব এবং সেগুলো শেষ করার অভিপ্রায় নিয়ে আমাদের আগামীর পথ চলতে হবে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও কণ্ঠযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শোকবার্তায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কামাল লোহানী ছিলেন একজন প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক মানুষ ও প্রথিতযশা সাংবাদিক। তার মৃত্যু বাংলাদেশ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি।  শিক্ষামন্ত্রী কামাল লোহানীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

অন্যদিকে কামাল লোহানীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

 

ইয়ামিন/এসএম