জাতীয়

কবি নির্মলেন্দু গুণের ৭৬তম জন্মদিন আজ

‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো'- এই একটি কবিতাই তাঁকে চিনিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাঁকে অনেকেই বলেন রাজনীতিসচেতন কবি। কবি নির্মলেন্দু গুণের ৭৬তম জন্মদিন আজ। 

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ এখনো তুমুল আলোচিত। আসলে তাঁর কবিতাগুলোই এমন। রাখঢাকে তিনি নেই। কবিতায় তিনি স্বাধীন শব্দ বিন্যাসেই অভ্যস্ত।

কবির আরো কিছু কাব্যগ্রন্থ: ‘না প্রেমিক না বিপ্লবী', ‘অমিমাংসিত রমণী', ‘দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী', ‘চৈত্রের ভালোবাসা', ‘ও বন্ধু আমার', ‘আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও',  ‘নেই কেন সেই পাখি', ‘যখন আমি বুকের পাঁজর খুলে দাঁড়াই', ‘প্রিয় নারী হারানো কবিতা', ‘মুঠোফোনের কাব্য'- নামেই যায় চেনা, এগুলো নির্মলেন্দু গুণের কবিতার বই।

কবির জন্ম ১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবন গ্রামে। বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী ও মা বিনাপানি। মাত্র চার বছর বয়সে তার মাকে হারানোর পরে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলে নতুন মায়ের কাছে হাতেখড়ি হয় তার পড়াশোনার। 

প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় মেট্রিক পরীক্ষার আগে। নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়  প্রথম কবিতা ‘নতুন কাণ্ডারী’।

৬৬’ এর ছয় দফা আন্দোলনের সঙ্গে আত্মিকভাবে জড়িত ছিলেন।স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে যতবার রাষ্ট্র বিপথগামী হয়েছে- কলম ধরেছেন তিনি, লিখেছেন একের পর এক শ্রেণি সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধী কবিতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হবার পর প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি।

২১ জুলাই ১৯৭০। তরুণ কবিদের কবিতা পাঠের আসরে পাঠ করেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘হুলিয়া’। হুলিয়া তাকে কবি খ্যাতি এনে দেয়। বড় বড় লেখকরা তার কবিতার প্রশংসা করেন। সমালোচনা লেখেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী ‘তৃতীয় মত’ কলামে। খান ব্রাদার্স প্রকাশ করে তার ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিমান লেখক শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থে ছাপেন ‘হুলিয়া’ কবিতাটি।

কবিতাটির শেষ ক'টি লাইন: 

ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর: – আমাদের ভবিষ্যত কী? – আইয়ুব খান এখন কোথায়? – শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন? – আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?

আমি কিছুই বলবো না৷ আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্যতকে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷ উৎকন্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিৎকার করে কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো: ‘আমি এসবের কিছুই জানি না, আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷’

শতাধিক বইয়ের লেখক কবি নির্মলেন্দু গুণের নির্বাচিত কবিতার সংকলন ‘সিলেকটেড পোয়েমস অব নির্মলেন্দু গুণ’ প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবি আহসান হাবীব সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও কবি তাঁর জীবন ও কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন অসংখ্য দেশি-বিদেশি নানান পুরস্কার ও সম্মাননা।

সব মিলিয়ে এটাই বলা যায়, কবি নির্মলেন্দু গুণ এক জীবন্ত কিংবদন্তী। কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

 

ঢাকা/টিপু