জাতীয়

করোনাকালে মুদ্রণ শিল্পে ক্ষতি ৪ হাজার কোটি টাকা

কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ খাতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রভাব খাত সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবিকার ওপর পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের সংকট ও প্রতিকার নির্ধারণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত এ তথ‌্য জানান।

তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছেন।  এখাতের উদ্যোক্তাদের ১০০ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সক্ষমতা রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে এখাতের মোট ১২ হাজার কোটি টাকার বাজারের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব‌্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারি সংকট শুরু হওয়ার পরপরই সরকার তা মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যা ঋণ সুবিধা পাওয়া উদ্যোক্তাদের সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, প্রতিবছর এখাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হয়ে থাকে। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এখাতের উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এখাতের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি ৭০ শতাংশ কমে গেছে।  তিনি বর্তমান অবস্থা উত্তরণে প্রণোদনা প্যাকেজের সুষম বণ্টনের প্রস্তাব করেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-এর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ জানান, দেশে অনুমোদিত ২৫৪টি সংবাদপত্রের মধ্যে মাত্র ৮৬টি বর্তমানে চালু রয়েছে।  মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে শুধুমাত্র ঢাকাতেই প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে।  মহামারির কারণে প্রায় ২০০ জন গণমাধ্যমকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে এটিকে একটি শিল্পখাত হিসাবে ঘোষণার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারর্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)-এর সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান এখাতের কাঁচামাল আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক হার কমানোর দাবি জানান।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, প্রায় ২০ লাখ জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বাশির উদ্দিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মুদ্রণ শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা মাত্রারিক্তভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ডিসিসিআই’র সভাপতি শামস মাহমুদের সঞ্চালনায় পরিচালিত এ ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল, বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মো. বাশার পাটোয়ারী এবং চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফোন অ্যাসোসিয়েশন-এর সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ বেলাল প্রমুখ।

   

ঢাকা/এম এ রহমান/জেডআর