জাতীয়

লোকসান ঠেকাতে দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর দুই কৌশল  

করোনায় অন‌্যান‌্য খাতের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের এয়ারলাইন্সগুলোও। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। কবে নাগাদ এই সংকট থেকে মুক্তি মিলবে, তাও জানে না কেউ। এজন‌্য লোকসান ঠেকাতে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো দুই ধরনের উ‍দ্যোগ নিয়েছে। এর একটি হলো—যাত্রীবাহী বিমানকে কার্গোবিমানে পরিণত করা, অন‌্যটি হলো যাত্রীভাড়া কমানো।

সূত্র বলছেন, যাত্রী চলাচল না থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণসহ সব ধরনের খরচ বহন করতে হয়েছে এয়ারলাইন্সগুলোকে। ফ্লাইট পরিচালনা ও বিমানবন্দরে পার্কিংসহ বিভিন্ন ফি ঠিকই দিতে হচ্ছে। যাত্রী পরিবহন, ফুয়েল ও মেইনটেন্যান্স খরচের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে করোনার স্বাস্থ্যবিধির উপকরণ (মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার) সরবরাহ ও বিতরণের খরচও।

করোনার ধাক্কা সামলাতে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বেসরকারি বিমানসংস্থা ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। এর মধ্যে রয়েছে কার্গো ফ্লাইটে জোর দেওয়া, অভ্যন্তরীণ রুটে কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন প্রভৃতি। দেশীয় তিন রুট সৈয়দপুর, সিলেট ও চট্টগ্রাম রুটে আগের চেয়ে কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে এই দুটি সংস্থা। নভোএয়ার সৈয়দপুর রুটে ২ হাজার ৫০০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে আর ইউএস-বাংলা করছে মাত্র ১ হাজার ৯০০ টাকায়।

বিমানের কার্যক্রম সম্পর্কে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘বছরের শুরু থেকেই করোনার কারণে নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এই কারণে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ক্যাপাসিটি লস ছিল ২৬ শতাংশ। মার্চে ৭৬ শতাংশ। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সব কমার্শিয়াল অপারেশন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জুলাইসহ গত তিন মাসে বিমানের লোকসান হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।’ ফলে লোকসান ঠেকাতে তিনি সরকারি ভর্তুকির দাবিও জানান।

মোকাব্বির হোসেন আরও বলেন, ‘জুলাই মাস থেকে বিমান সীমিত পরিসরে চার্টার্ড ও কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এরপর গতমাস থেকে সপ্তাহে একটা করে ঢাকা-লন্ডন, ঢাকা-দুবাই এবং ঢাকা-ইউএইতে কমার্শিয়াল ফ্লাইট শুরু হয়েছে। বাকি আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে।’

ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা এয়ারলাইন্সের জন‌্য বিরাট ধাক্কা। ‌অথচ অপারেশন খরচ ছাড়া বাকি সব খরচ বহন করতেই হচ্ছে। প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকার মতো আয়বঞ্চিত হচ্ছি।’

বর্তমান কার্যক্রম ও করোনাকালীন পরিকল্পনা সম্পর্কে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করছি। এছাড়া, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে গত কয়েকমাসে। কম ভাড়ায় অভ‌্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু রেখেছি ভবিষ্যৎকে টার্গেট করে। ’

এদিকে, আগামী ১৬ আগস্ট থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা। আগামী ১৬ আগস্ট থেকে সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে চার মাস ২২ দিন বন্ধ থাকার পর আবারও এই ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে। উভয় দেশের সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী যাত্রীদের ভ্রমণ করতে হবে।’

নভোএয়ারের মার্কেটিং সেলস বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার একেএম মাহফুজুল আলম বলেন, ‘আমরা এখন শুধু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করছি। এই মুহূর্তে ফুল প্যাসেঞ্জার পাওয়ার মতো অবস্থা নেই। আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি ভাড়া কমিয়ে।’

দেশের অন রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ২২ মার্চ থেকে সব প্রকার কার্যক্রমই বন্ধ। সব কর্মীকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবৈতনিক ছুটিতে পাঠায় সংস্থাটি। শুধু করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে বিক্রি হওয়া টিকিটের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য অল্প কিছু কর্মী কাজ করছেন। সংস্থাটির বিমান বন্দর ও চট্টগ্রাম শাখার যোগাযোগের নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।