জাতীয়

সব দেশ যেন একসঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন পায়: জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে বলেছেন, আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন পাবে। এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।  সব দেশ যাতে এই ভ্যাকসিন সময়মতো এবং একইসঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।  কারিগরি জ্ঞান ও মেধাসত্ব প্রদান করা হলে, এই ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।  

শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় (নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল ১০টা) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদে পূর্বনির্ধারিত রেকর্ডকৃত ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদ্যমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ আরও প্রকট হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ মহামারি আমাদের উপলদ্ধি করতে বাধ্য করেছে, এ সংকট উত্তরণে বহুপাক্ষিকতাবাদের বিকল্প নেই।’

‘জাতিসংঘের ৭৫তম বছর পূর্তিতে জাতিসংঘ সনদে অন্তর্নিহিত বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা রয়েছে।  জাতীয় পর্যায়ে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও বহুপাক্ষিকতাবাদের আদর্শ সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, আমাদের সবার ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি।  এই ভাইরাস আমাদের অনেকটাই ঘরবন্দি করে ফেলেছিল।  যার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতিক কর্মকাণ্ডও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।  বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করেছে।’

‘তবে বাংলাদেশে আমরা প্রথম থেকেই জীবন ও জীবিকা’ দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম।  দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছি।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিায়িত্ব পালনরত চিকিৎসকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি স্বাস্থ্যকর্মীসহ সকল পর্যায়ের জনসেবকদের যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে চলেছেন। সাধুবাদ জানাই জাতিসংঘ মহাসচিবকে এই দুর্যোগকালে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগের জন্য। বাংলাদেশ শুরু থেকেই যুদ্ধ বিরতিসহ তার অন্যান্য উদ্যোগসমূহকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।’

‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জাতিসংঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এই মহামারি আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।’

বক্তব্যের শুরুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে।  এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘আমরা ভবিষ্যৎ চাই, জাতিসংঘ আমাদের প্রয়োজন: বহুমুখীতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিতের মাধ্যমে।’ 

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর কারণে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্ব নেতারা বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভার্চুয়াল অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন।