জাতীয়

অন‌্য সরকার ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি দুরবস্থায় রূপ নিতো: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অন‌্য কোনো সরকার থাকলে পরিস্থিতি দুরবস্থায় রূপ নিতো।

শনিবার (৩ অক্টোবর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণের সময় মানুষ যেন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য সরকার সবকিছু করেছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের এখানে আক্রমণ করলে আমাদের কী পরিমাণ মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে, তার মধ্যে কত জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হতে পারে, কতজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হতে পারে— সব বিষয় নিয়ে আমরা হিসাব করেছি। ’

‘সেই অনুযায়ী আমরা হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করেছি। আমরা নিশ্চিত করেছি যেন প্রতিটি জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত অক্সিজেন সাপোর্ট থাকে, আইসিইউ সাপোর্টটা থাকে। হ্যাঁ, শুরুতে এটা করতে কষ্ট হয়েছে—এটা ঠিক। এখন কিন্তু আমরা প্রায় সব জায়গায় এটা করে ফেলেছি। ’

এ সময় বাড়তি রোগীর জন‌্য অতিরিক্ত চিকিৎসক-নার্স-টেকনিশিয়ান নিয়োগের দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুই হাজার ডাক্তার ও নার্স আমরা নিয়োগ দিয়ে দিয়েছি। আলাদাভাবে তিন হাজার নার্স আমরা নিয়োগ দিয়েছি।  টেকনিশিয়ান লাগবে—তাদেরও আমরা নিয়োগ দিয়েছি। এজন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়— সবাইকে একসঙ্গে বসে নিয়ে অন দ্য স্পট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।  কারণ নিয়োগটা আগে দরকার ছিল।’

করোনা মোকাবিলায় দ্রুত বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু একটা কথা তো স্বীকার করতে হবে, যখন যেটা নির্দেশ দিয়েছি তারা করেছে।  অনেক কাজ আছে, সেগুলো করতে অনেক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। ’

‘আমি বলেছি—এটা ইমার্জেন্সি, এত কিছু মানতে হবে না। আগের মানুষকে সেবা দিতে হবে।  তারপর যদি কোথাও অসুবিধা হয়, আমরা দেখব। তারা কিন্তু সেভাবেই কাজ করেছে।  তারা কাজ করেছে বলেই কিন্তু আমরা এই করোনাটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।’

সরকারের পাশাপাশি সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বলেই মানুষকে দুরবস্থায় পড়তে হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি যখনই যাকে বলেছি, কেউ এতটুকু পিছুপা হয়নি।  মানে সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ’

‘আমার মনে হয় একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই মানুষ এই সহযোগিতা পেয়েছে।  এখানে যদি অন্য কেউ থাকত কত যে মানুষ মারা যেত, কত যে দুরবস্থায় হতো—ভাষায় বলা যায় না।”

বক্তব্যের শুরুতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।  

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার মধ্যেই আসলো ঘূর্ণিঝড়, তারপর বন্যা। সব মিলিয়ে সারা দেশের মানুষের জীবন দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে ছিল। কিন্তু সেই সময় আমাদের দলের নেতাকর্মীরা প্রত্যেকে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকায় তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের পাশে ছিল।  মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা অসচ্ছল অনেকেই আছে, যারা করোনার মধ্যে ভীষণ কঠিন অবস্থায় পড়লেও অন্যের কাছে হাত পাততে পারেননি।  তাদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি তারা করেছে। ’

‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজটি তারা করেছে।  বন্যায় সময়ও আমাদের নেতাকর্মীরা কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।”

সরকার-প্রশাসন-সংগঠন সবাই মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার এরকম দৃষ্টান্ত খুব কম আছে বলেও মন্তব‌্য করেন শেখ হাসিনা।

করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি, আমাদের অর্থনীতি যেন থেমে না যায়।  সেভাবে বাজেট দিয়েছি।  বাজেটে খুব বেশি একটা কমাইনি।  বরং গত বাজেটের চেয়ে কিছুটা বাড়িয়েছি। আমরা বাজেট ঠিক রেখেছি, যেন আমাদের অর্থনীতি গতিশীল থাকে।’

‘করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা আসবে।  আর মন্দার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, খাদ্যভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশে যেন কোনোভাবেই খাদ্যাভাব দেখা না দেয়, কৃষক যেন মাঠে থাকে, ফসল যেন উৎপাদন হয়—আমরা সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কারণ কৃষক মাঠে থাকলে ফসল ফলবে, সেটা আমাদের কাছে থাকলে অন্তত আমাদের খাবারের অভাবটা হবে না।  আল্লাহর রহমতে সেটা কিন্তু হয়নি।”এ সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সরকারের নানামুখি পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী করোনাকালে এর উপকারিতা ও সুফলের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

‘২০০৮ সালে যখন আমরা নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছি, অনেকে অনেক কথা বলেছে। কত কথা শুনতে হয়েছে। আজ দেখা গেল সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই আমরা সবকিছু সচল রাখতে পেরেছি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা রাখতে পেরেছি।’