জাতীয়

‘আমাদের বাড়ি-ঘর নাই, যাওয়ার জায়গাও নাই’

‘আমাদের বাড়ি-ঘর নাই, যাওয়ার জায়গাও নাই। কেউ খোঁজ নেয় না; না বিজেএমইএ, না মালিক, না সরকার।’

কথাগুলো বলছিলেন তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক জরিনা বেগম।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর অদূরে আশুলিয়া উপজেলার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নেয় ১১২ জন শ্রমিকের প্রাণ। আহত হন শতাধিক শ্রমিক। দুই মাসেরও বেশি সময় (৬৭ দিন) ধরে ক্ষতিপূরণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন ওই কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক।

তিন দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। দাবিগুলো হলো- এককালীন ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও দীর্ঘমেয়াদি সুচিকিৎসার ব্যবস্থা।

আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪৫ পরিবারকে নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন জরিনা বেগম। সমন্বয়কের ভূমিকায় থাকা জরিনা তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টসের সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা এখানে মোট ৩০০ জন ছিলাম। এদের মধ্যে অনেকে কাজে বা গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছে। বাকি আছি আমরা ৪৫ পরিবার। আমরা কেউই ক্ষতিপূরণ পাইনি। 

তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের মালিক দেলোয়ার হোসেনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কি অপরাধ ছিল যে, কারখানার তালা বন্ধ করে, আগুনের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল? এতগুলো শ্রমিক পুড়িয়ে মারলো, তারপরও তার কেনো শাস্তি হচ্ছে না! আমাদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না? আমরা চাই আমাদের মালিক আমাদের পাশে আসুক, আমাদের সমস্যার সমাধান করুক। আমরা ঘরে ফিরে যেতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিজিএমইএ (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি) থেকে একবার এসেছিল, এসে আমাদের ৪৫ জনের তালিকা করে নিয়ে গেছে। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাইনি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র লেবার সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারা অবস্থান করলে কি করা যাবে বলেন? আট বছর পর এসে বললে কি করা যাবে? তখনকার সময় যারা ছিল তাদেরকে বিজিএমইএ পেমেন্ট ও যাবতীয় চিকিৎসা করেছে। বিভিন্ন বায়ারদের কাছ থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। রানা প্লাজার সময় একটা ফান্ড করা হয়েছিল, সেখান থেকে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এখন তারা আসতেছে। তারা ওখানকার শ্রমিক কিনা এটার প্রমাণ পাবো কোথায়? 

বাংলাদেশের ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের কল্যাণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসমূহ বাস্তবায়ন; কর্মক্ষেত্র শৃঙ্খল রাখতে মালিক, শ্রমিক, সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

এই অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের অধিদপ্তর ও শ্রম মন্ত্রণালয় বিষয়টি অবহিত। প্রেসক্লাবে গিয়ে আমরা সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবি-দাওয়া প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এছাড়া শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে তাদের কোনো সাহায্য করা যায় কিনা এ বিষয়ে আমাদের সচিব বিবেচনা করছেন। আরেকটি বিষয় হলো ওখানে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম তারা কি পরিমাণ সাহায্য পেয়েছে। তারা বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। কেউ দেড় লাখ, কেউ পাঁচ লাখ পেয়েছেন। ১৯ লাখ পর্যন্তও একজন শ্রমিক পেয়েছেন। এদের মধ্যে ছয় জন একেবারেই সুযোগ-সুবিধা পায়নি। এর মধ্যে আমরা তাজরীন ফ্যাশনের মালিককে তলব করি। তিনি জবাবও দিয়েছেন, সব তথ্যও দিয়েছেন। এখন যারা একেবারেই কিছু পায়নি তারা শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে কিছু পেতে পারেন। তবে এদের কিছু দেওয়া মালিক আইজি ও সচিব মহোদয়। আমরা শুধু সমন্বয় করেছি।

এ বিষয়ে কথা বলতে তাজরীর ফ্যাশন লিমিটেডের মালিক দেলোয়ার হোসেনকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।